জাতীয়

ভয়াবহ সিডর দিবস আজ

আজ ১৫ নভেম্বর। ভয়াবহ সিডর দিবস। ২০০৭ সালের এই দিনে ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার পানি আঘাত হেনেছিল উপকূলীয় এলাকায়। এতে পানির চাপে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীপাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৬৮ হাজার ৩শ ৭৯টি ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল।

এদিন মারা যায় হাজার হাজার মানুষ ও অসংখ্য গবাদিপশু, ভেসে গেছে বেড়িবাঁধ, কোটি কোটি টাকার ফসল, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। উপকূলের বেঁচে থাকা মানুষগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছে না সিডরের সেই ভয়াবহ স্মৃতি। তাদের এখনও সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায়।

বরগুনা : সরকারি হিসেব অনুযায়ী, সেদিন শুধু বরগুনা জেলাতেই এক হাজার ৩৪৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ১শ’ ৫৬ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এবং আহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৫০ জন। মাত্র আধাঘণ্টার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূল। প্রবল তোড়ে বেড়িবাঁধ উপচে এবং ভেঙে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহূর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তূপে।

বরগুনা প্রেসক্লাব সিডর দিবস পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনগুলো এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে। আজ সকালে করা হবে শোকর‌্যালি। পরে গর্জনবুনিয়া গণকবরে করা হবে পুস্পস্তব অর্পণ। সবশেষে সিডরের কবলে নিহত ও নিখোঁজদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণসভা ও দোয়ানুষ্ঠান।

ঝালকাঠি : বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লক্ষাধিক পরিবার। কৃষি, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বাঁধ, ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ছয়শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালানোসহ দুর্গতদের পুনর্বাসনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।

বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়া বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্ট সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। ওই সময়ে সড়ক বিভাগের আওতাধীন ১৮টি সড়ক এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন ৩৯টি সড়ক ও ২০টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থ বরাদ্দ ও উদ্যোগের অভাবে অনেক কাজ ঝুলে রয়েছে।

পটুয়াখালি : সিডরের ভয়াল তাণ্ডবে কলাপাড়ায় ৯৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আজও নিখোঁজ রয়েছে সাত জেলে ও এক শিশু। আহত হয়েছে ১৬৭৮ জন। এর মধ্যে ৯৬ জন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। বিধবা হয়েছেন ১২ গৃহবধূ। এতিম হয়েছে ২০ শিশু। সম্পূর্ণভাবে ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ পরিবার। আংশিক বিধ্বস্ত হয় ১৪ হাজার ৯২৫টি ঘরবাড়ি।

তিন হাজার ২২৫ জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রকৃতির ওই কালো থাবায় শতকরা ৯০ ভাগ পরিবার ক্ষতির শিকার হয়। এর মধ্যে ৫৪৭৩টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। ৫৪০ পরিবারকে ব্যারাক হাউস নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে পাঁচ বছর আগে। কিন্তু এসব ব্যারাকের অন্তত ৩০০ কক্ষে লোকজন থাকছে না।

বরিশাল : ভয়ংকর সিডরের সেই কাল রাতের কথা স্মরণ করতেই তারা যেন আবারও শোকে উথলে ওঠেন স্বজন হারানোর বেদনায়। ভুলে যেতে চাইলে ও মনের গহীনে বাসা বেঁধে আছে জমাট বাঁধা যন্ত্রণা। ১৫ নভেম্বর ২০০৭ সালের সেই কালো রাতের পর এখনও কেউ বিধ্বস্ত। ভিটেমাটিতে আবার কেউবা গণকবরের পাশে কেঁদে বেড়াচ্ছেন স্বজনদের কথা মনে করে।

বাগেরহাট : সডরের অগ্নিমূর্তির কথা মনে করে অনেকে এখনও আঁতকে ওঠে নিজের অজান্তে। মহাপ্রলয়ংকারী সিডরে উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ এলাকার সবুজের সমারোহকে ধ্বংস যজ্ঞে পরিণত করে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে বৃক্ষরাজি ও উঠতি ফসলের। ২১শ ৬৫ হেক্টর জমির উফশী ফসল এবং ১২ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমির আমন ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট: ৬:৪৫ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার

ডিএইচ

Share