কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে শুক্রবার দুপুরে দেবীদ্বারে দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। এতে আটকে পড়ে শতশত যানবাহন। আরদশজন যাত্রীর মতোই যানজটের কবলে পড়েন ঢাকা থেকে নবীনগর গামী বাসের যাত্রী সাপ্তাহিক গ্লোবাল নেট এর সম্পাদক মিঠু ধর চৌধুরী। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে অস্থির এই গণমাধ্যমকর্মী ফোন করে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই প্রতিবেদকের কাছে।
তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এমন একটি গুরুত্বপুর্ণ সড়কে এভাবে যানজটে আটকে থাকা সত্যিই দুঃখজনক। এমন দুঃখ শুধু একদিন আর একজন মিঠু ধর চৌধুরী নয়, প্রায় বছর জুড়ে এমন অসংখ্য যাত্রী এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রায় বছর জুড়েই লাগাতার সংস্কার কাজ চলার কারণে এভাবে প্রতিনিয়তই অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রী সাধারণের।
দেশের অন্যতম ব্যস্ততম কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক এ মহাসড়ক ব্যবহার করে মুরাদনগর ও নবীনগরে অবস্থিত পাঁচটি গ্যাস ফিল্ডের ভারী যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আসা ভারতীয় পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের বারতি চাপ।
এছাড়াও এসড়ক ব্যবহার করে কুমিল্লা ছাড়াও চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরববাজার, কিশোরগঞ্জ, ময়ময়নসিংহসহ দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রীবাহী ও মালবাহী অসংখ্য ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লংভেহিকেল চলাচল করে।
সংস্কার কাজে চরম ধীরগতি এবং অপরিকল্পিত ও এলাকা ভেদে বিচ্ছিন্ন ভাবে সংস্কার কাজের কারনে নিত্যদিন ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতেকরে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন ঘন্টারপর ঘন্টা আটকে থাকতে হচ্ছে রাস্তায়।
এই যানজট কখনো মহাসড়কের দেবীদ্বারে, কখনো কংশনগরে, কখনোবা দেবপুর এলাকায়। আর এমন পরিস্থিতি শুধু এক দিনের বা এক মাসের নয় সংস্কার কাজ চলমান এ জনদুর্ভোগের বয়সও প্রায় বছর ছুঁই ছুঁই।
এতে মহাসড়কটির দেবপুর থেকে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে কখনো কখনো ৪/৫ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এক দেড় ঘন্টায় অতিক্রম করা যায় এইটুকু পথ ! স্বাভাবিক ভাবে যেখানে সময় লাগার কথা ছিলো সর্বোচ্চ পৌণে এক ঘন্টা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ‘কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা থেকে দেবিদ্বার পর্যন্ত সড়কটির সংস্কার কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারীর মাসে প্রথমে ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে সাহেবের বাজার পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়। এরপর অজ্ঞাত কারণে কিছু সময় কাজ বন্ধ থাকে। এরপর মে মাসের শেষ দিকে দেবপুর বাজার এলাকায় কুমিল্লাগামী অংশের কিছু কাজ করা হয়। পরে কংশনগর বাজার অংশে একমুখী (সিলেট মুখী) কিছু কাজ সম্পন্ন করে।
অতঃপর আবারও বিরতি দিয়ে দেবিদ্বার উপজেলা সদরে নতুন করে কাজ শুরু করে। এতে দেবপুর এলাকায় সিলেটগামী অংশে ভারী যানবাহন আটকে থাকে। যার ফলে কংশনগর এলাকায়ও যানচলাচল ধীরগতির সৃষ্টি হয়। এ কারনে প্রতিদিনই এখানে সৃষ্ট হচ্ছে মাইলের পর মাইল যানজট। এ সময় যানবাহনের যাত্রীসহ চালকদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
সম্প্রতি দেবিদ্বার এলাকায় কাজ শুরু হলে দেবীদ্বার সদর এলাকার বানিয়াপাড়া মাটিয়া মসজিদ থেকে নিউমার্কেট দৈনিক কাঁচা বাজার, হাসপাতাল গেইট ও থানা গেইট হয়ে জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজ’ পর্যন্ত এবং মুরাদনগর উপজেলার ‘কোম্পানীগঞ্জ বাজার’ এলাকায় নিত্যদিনের যানজট সৃষ্ট হতে থাকে।
এসব এলাকায় সড়ক ও জনপদের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা, দৈনিক বাজার, হকার এবং পৌরসভার ইজারায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ড, ব্যটারী চালিত অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস এবং ট্রাক্টরের দখলে থাকায় যানজট থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ মহাসড়ক ব্যবহার করে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা-কোম্পানীগঞ্জ, মুরাদনগর রুটে চলাচলকারী পরিবহনের চালকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সড়কের বেহাল অবস্থা। সংস্কার কাজ শুরুর পর দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। তারা বলেন, রাতের বেলায় সংস্কার বা মেরামতের কাজ করলে জনদুর্ভোগ অনেকটা কম হতো।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড.আহাদ উল্লাহ বলেন, করোনার কারনে কাজের কিছুটা ধীরগতি হওয়ায় সংস্কার কাজ বন্ধ থাকে। এতে দূর্ভোগ বেড়ে যাওয়ায় যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগ হচ্ছে সাধারন মানুষের। এসব বিবেচনা করে আমি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এর আগেও ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ‘মহাসড়কটির বেহাল দশা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো। এর পর থেকেই সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ‘সড়কটি চার লেনে উন্নীত হওয়ার কথা থাকলেও এক যুগেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।’
সে সময় সড়কের এই দুরাবস্থার বিষয়ে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (কুমিল্লা সার্কেল) রানা প্রিয় বড়ুয়া বলেছিলেন, ‘মহাসড়কটির সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে টেন্ডার করা হয়েছে।’
প্রতিবেদক:জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল,২৫ জুলাই ২০২০