Home / বিশেষ সংবাদ / ভোট যুদ্ধ শেষ : পোস্টারে খাতায় লিখবে অসহায়-এতিমরা
অসহায়-এতিমরা

ভোট যুদ্ধ শেষ : পোস্টারে খাতায় লিখবে অসহায়-এতিমরা

সদ্য শেষ হলো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ফলাফলও হয়ে গেছে। বিজয়ীরা দায়িত্ব নেবেন আর পরাজিতরা আগের মতোই নিজেদের কাজ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু রাজধানীজুড়ে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত লেমিনেটেড পোস্টারগুলোর কী হবে?

‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ গড়ার স্বপ্নের কথা বলে পলিথিনের পোস্টারে ঢাকাকে ছেয়ে ফেলায় সমালোচনার মুখে পড়েন স্বপ্নবাজ জনপ্রতিনিধিরা। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো তো লেমিনেটেড পোস্টার এবং এসব পোস্টার থেকে উৎপাদিত বর্জ্য সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর প্রায় ১২ দিনের মধ্যেই দুই হাজার ৪৭২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। পুরো নির্বাচনে পোস্টার থেকে বর্জ্য জমবে দুই হাজার ৫০০ টন। এ ছাড়া নির্বাচনী পোস্টারসহ সবমিলে গত বছরজুড়ে ঢাকা শহরে ১০ হাজার টন লেমিনেটেড পোস্টারের বর্জ্য তৈরি হয়েছে।

এমন যখন অবস্থা তখন নির্বাচনের দু’দিন পর সোমবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পোস্টার সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম সাঁটানো পোস্টার নিজেই অপসারণে নামে এদিন।

তবে ভোট শেষে বর্জ্যে পরিণত হওয়া এসব পোস্টার নিয়ে সুন্দর একটা উদ্যোগ নিয়েছে ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পোস্টারগুলো সংগ্রহ করে এতিম ও অসহায় শিশুদের লেখার জন্য খাতা বানাচ্ছে সংগঠনটি। এতে কয়েক হাজার এতিম শিশু লেখার খাতা পাবে কয়েকদিনের মধ্যেই। এসব পোস্টারের বিপরীতপাশের সাদা অংশকে কাজে লাগিয়ে খাতা বানানো হচ্ছে।

খাতার পাশাপাশি ঠোঙাও তৈরি করবে সংগঠনটি। এতে করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি এতিম, অসহায় পথশিশুদের খাতার খরচ মিটবে বলে আশা করছেন তারা।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী হাবীবুর রহমান সম্রাট এ বিষয়ে বলেন, আমরা নিজ উদ্যোগে এসব পোস্টার সংগ্রহ করছি, আবার অনেকে আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। আমরা ইতোমধ্যে দুই ট্রাক পোস্টার সংগ্রহ করছি এবং অন্যরাও আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা খাতা বানানোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছি। এক লাখ পোস্টারে ৪০ হাজার খাতা বানানো যাচ্ছে। আমাদের ছয়টি এতিমখানায় ৫০০ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া আমরা অসংখ্য পথশিশু নিয়ে কাজ করি। প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২৫০০ শিশুর খাবার বিতরণ করি। এসব এতিম ও পথশিশুদের লেখার খাতা বানানোর জন্য আমরা পোস্টারগুলো সবার কাছ থেকে নিতে চাই।

পোস্টারে থাকা পলিথিনগুলো কী করতে চান- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শিশুদের মাঝে পোশাক বিতরণ করি, বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। সেই সময় এ পলি দিয়ে প্যাকেট বানাতে চাই। এ ছাড়া প্রতি রমজানে এক লাখেরও বেশি ইফতারি-সেহেরি বিতরণ করি, তখন ছোলা দেয়ার জন্য আমাদের পলি লাগে। তাই এ পলিগুলো পরিষ্কার করে আমরা ওইসব কাজে ব্যবহার করতে চাই।

বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেজেও এ বিষয়ে পোস্ট দিয়ে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনী পোস্টার থেকে বানানো খাতা! কয়েক হাজার এতিম শিশু লেখার খাতা পাবে এ কয়দিনের মাঝে।’

‘বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ কল দিয়ে যাচ্ছেন তাদের সংগৃহীত পোস্টার নিয়ে আসার জন্য। জঞ্জাল থেকে শিক্ষার আলো ফোটানোর এ মিশনে অংশ নিচ্ছেন সকল দলের নেতারা।’ পোস্টার পুড়িয়ে পরিবেশ বিপর্যয় না ঘটিয়ে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধও জানানো হয়েছে তাদের পেজে।

সম্রাট বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্ট পেপারে এক পৃষ্ঠা অব্যবহৃত থাকে, যদি তারা এসব আমাদের কাছে তুলে দিত, তবে আমরা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দিতে পারতাম।

সংগঠনটির অন্য একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ভোট যুদ্ধ শেষ, মূল্যহীন হয়ে পড়েছে প্রচারণার পোস্টারগুলো। কাগজগুলো হয়তো চলে যাবে ডাস্টবিনে কিংবা ময়লা হয়ে ঝুলে থাকবে মাসের পর মাস। কিন্তু চাইলে পুরাতন এ পোস্টারগুলোকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।’

‘আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা আজ ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে এ পোস্টারগুলো সংগ্রহ করেছে। এগুলো দিয়ে তৈরি হবে কিছু এতিম শিশুর খাতা, প্লাস্টিকে প্যাকেজ হবে শীতের কাপড় আর দড়ি। ব্যবহার হবে চাল-ডাল প্যাকেজিংয়ে। জানি, পাগলামি চিন্তা, তবুও বোকা মনকে অনুসরণ করতে চাই, সমাজকে ভিন্নভাবে ভাবাতে চাই।’

এদিকে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শেষে এসব পোস্টার অপসারণ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা গতকাল থেকে নির্বাচনী পোস্টার অপসারণের কাজ শুরু করেছি। আশা করা যায়, খুব শিগগিরিই এগুলো অপসারণের মাধ্যমে শহরের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরেয়ে আনতে পারব’।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগের বিষয়ে খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে এটা ভালো উদ্যোগ, তারা যদি এটা করতে চায় এবং পোস্টারের মধ্যেমে পরিবেশের যদি কোনো ক্ষতি না হয়, তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। তারা যদি আমাদের জানায় এবং নিশ্চয়তা দেয় পোস্টার, পলিথিনের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি হবে না, তাহলে আমাদের এসব দিয়ে দিতে আপত্তি নেই’।

বার্তা কক্ষ,৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০