৩১ দল নিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)’। এই জোটে একটি দলও নিবন্ধিত নয়।
১০-দলীয় অপর একটি জোট বেঁধেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া শওকত হোসেন নিলু। নাম ‘ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)’। এই জোটের ৯টি দলেরই নিবন্ধন নেই।
এখানেই শেষ নয়, গত ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের মধ্যে নিবন্ধন নেই ১২ দলের। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪টি।
জানা গেছে, প্রায় শখানেক নামসর্বস্ব, অনিবন্ধিত দল একাদশতম জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জোটে যুক্ত হওয়ার প্রতিযোগিতায় মাঠে নেমেছে। এসব নিবন্ধনহীন নামসর্বস্ব দল ক্ষমতাসীন ১৪ দল ও বিএনপির ২০ দলে ঠাঁই না পেয়ে বিকল্প প্লাটফর্ম তৈরি করছে। লক্ষ্য একটাই জোটবদ্ধ থেকে বড় কোনো জোটে শরিক হয়ে ক্ষমতার স্বাদ নেওয়া।
গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ফল ঘেঁটে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনে ৪০ নিবন্ধিত দলের মধ্যে (জামায়াত ছাড়া) মাত্র ৫টি দল সারা দেশে প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। ৮ থেকে ১০টি দল আংশিক প্রার্থী দিতে সক্ষম।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বাকি দলগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতাই রাখে না। এসব দল দুই-একবার চেষ্টা করে জামানত হারিয়ে এখন জোটের কাঁধে ভর করে রাজনীতি করছে। অথচ এসব অনিবন্ধিত নামসর্বস্ব দল নিয়েই জোট ভারী করার নীতিতে রাজনীতি করছে প্রধান দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, গত বছরের জুন থেকে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে যুগপৎভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে নাজমুল হুদার বিএনএ জোট। আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধ হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে জোটটি।
১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বিএনএর বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন। জোটের অন্য শরিকদের অমত থাকলেও নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন জোট ১৪-দলীয় জোটে ভেড়ার গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল যে কোনো দল জোটে আসতে পারে। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার জোট শর্ত মেনে আসতে পারে। এতে দোষের কিছু দেখছি না।’
জোট বড় করার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন এলে সমমনা দল নিয়ে জোট বাড়তে পারে। নাজমুল হুদার জোট ১৪ দলে যোগ দিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৪৫-দলীয় বৃহৎ জোটের নেতৃত্ব দেবে। এতে করে অধিকাংশ অনিবন্ধিত ও নামসর্বস্ব দল আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে রাজনীতির সুযোগ পাবে।
এ ব্যাপারে বিএনএ জোটের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, ‘৩১ দলের অনেকেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। সামনে নির্বাচন। এর আগে বাকিরা আবেদন করবে। আশা করি আমরা নিবন্ধন নিয়েই নির্বাচন করব।’ ১৪-দলীয় জোটের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা তো ১৪ দলেই আছি। জোটটির সঙ্গে একীভূতভাবে কাজ করছি। আশা করি আমরা নির্বাচনের আগে জোটভুক্ত হব।’
এনডিএফ জোটের শওকত হোসেন নিলু বলেন, ‘আমার দল এনপিপি’র নিবন্ধন আছে। বাকিরা নিবন্ধন না করলে আমার করার কিছু নেই। জোট করেছি। সামনে নির্বাচন। সেখানেও জোটবদ্ধ থাকব আশা করি।’
এদিকে কয়েকদিন আগে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ববি হাজ্জাজ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। তিনিও গোপনে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক নেতা বলেন, লক্ষ্য আগামী নির্বাচন; কিন্তু ভোট? তিনি বলেন, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করব। ভোট তো পড়বেই। এ বিষয়ে ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘লক্ষ্য তো একটা আছেই। তবে নির্বাচন এলেই কীভাবে ও কার সঙ্গে জোটবদ্ধ হব বলতে পারব। এ নিয়ে এখনই কিছু নয়।’
জোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে নেই বাম ঘরানার দলগুলোও। অনেকদিন থেকে একটি বৃহৎ জোট গঠনের চেষ্টা করছে এসব দল। ‘সাতদলীয় বাম মোর্চা’ নামে সিপিবি ও বাসদ কয়েকটি অনিবন্ধিত সমমনা রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্বাচনের আগে জোটবদ্ধ হচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। বলেন, ‘এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল দল ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচনের আগে সমমনাদের নিয়ে একটি কাক্সিক্ষত ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম সৃষ্টি হবে আশা করি।’
এদিকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন চেষ্টা করে যাচ্ছেন একটি বৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠনে। সিপিবি, বাসদ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য নিয়ে বারবার চেষ্টা করেও জোট গঠনে তিনি এখনো সফল হতে পারেননি।
জোট বাঁধার চেষ্টায় রয়েছেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রবও। বিকল্প জোট হিসেবে তিনি নিজ বাসায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি দলের রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলে একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারেন তিনি। দেশের ইসলামি দলগুলোও একটি জোট গঠনের চেষ্টা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছে। নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ। নির্বাচনের আগে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে জোটটির আত্মপ্রকাশ হতে পারে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নির্বাচন কমিশনে কোনো নিবন্ধন নেই।
এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মূল অংশ সম্প্রতি ২০ দল ত্যাগ করেছে। এ দল দুটির অংশবিশেষ ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে থাকলেও তাদেরও নিবন্ধন নেই। আরেক শরিক সাম্যবাদী দলেরও (একাংশ) নিবন্ধন নেই।
এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনও ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে অবৈধ ঘোষণা করেন। সব মিলে ২০ দলের ১২ দলই ভোটে অংশ নিতে পারবে না।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে ১২ দল আছে। এর মধ্যে কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশীদ খান) ও গণআজাদী লীগের নিবন্ধন নেই। এসব দল জোটবদ্ধ থেকে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায়। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ না পেলেও জোট ক্ষমতায় গেলে এসব দলের নেতাকর্মীরা ক্ষমতাবান হন।(প্রাইমনিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০২:৫৫,পি.এম ১৯ জানুয়ারী ২০১৭,বুধবার
ইব্রাহীম জুয়েল