ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যানসহ ১০টি পদে কোন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেনি। বেপরোয়াভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও রাম দা নিয়ে প্রার্থীদের বাড়ি হামলার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিরা মনোনয়ন জমা দিতে না পারায় এমনটি ঘটেছে বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন।
ফলে নির্বাচনের ১২ দিন আগেই নির্বাচিত হয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ সব চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলররা।
জামালপুর ইউনিয়নের ভোটাররা জানান, এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্ধও শেষ হয়েছে। কিন্তু কোন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নেই, নেই গ্রামে গ্রামে ভোটের আমেজ।
ভোটারদের ভাষ্যমতে কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরের ১৩ টি পদের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ ১০ টিতে কোনো প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী নেই। একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ওই সকল ওয়ার্ডে। যারা সবাই সরকারি দলের নেতা-কর্মী।
সাধারণ ভোটরার বলছেন, ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনের আনন্দ থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে তাদের প্রার্থী হতে দেওয়া হয়নি।
অনেকে প্রার্থী হতে চাওয়ায় বাড়িতে সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারনে কেউ প্রার্থী হতে পারেননি।
সরকারি দলের নেতাদের দাবি জামালপুর ইউনিয়নে বিএনপি’র অবস্থা খুবই খারাপ। যে কারণে তারা প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যে তৃতীয় ধাপে ৯ টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিমলা-রোকনপুর ও রায়গ্রাম ইউনিয়ন সিমানা নিয়ে জটিলতায় আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না। এ নির্বাচনে ৯ টি ইউনিয়নের প্রার্থীরা গত ৩১ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখন চলছে গ্রামে গ্রামে নির্বাচনি প্রচারনা।
উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোদাচ্ছের হোসেন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দি হিসেবে কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। শুধু চেয়ারম্যান নয় ওই ইউনিয়নের ৯ জন সদস্য একক প্রার্থী রয়েছেন। তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার অপেক্ষায়।
চেয়ারম্যান ছাড়াও যারা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয় অর্জনের পথে রয়েছেন তারা হলেন, জামালপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর (কামারাইল, গুটিয়ানি ও দুধরাজপুর) ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ কর্মী মোঃ সাইফুল্লাহ, ৩ নম্বর (উত্তর-গোপালপুর, দক্ষিন-গোপালপুর ও হরদেবপুর) ওয়ার্ডে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক মোল্লা, ৪ নম্বর (উল্লাহ ও জয়নগর) আওয়ামীলীগ কর্মী মোঃ ফসিয়ার রহমান, ৫ নম্বর (কাবিলপুর, খাঞ্জাপুর, বাগডাঙ্গ ও ভাটের-ভাটপাড়া) ওয়ার্ডে ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মফিজ খাঁন, ৬ নম্বর ( নাকোবাড়িয়া, পার-খালপকুলা ও বড়-ডাউটি) ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ কর্মী মোঃ মোবারক আলী তরফদার, ৭ নম্বর (বাসুদেবপুর ও হুদা-ডাউটি) ওয়ার্ডে মোঃ ইমদাদুল হক ও ৮ নম্বর (বড়-তালিয়ান) ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ কর্মী মোঃ শের আলী।
এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী রয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডে শিউলী ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নূর জাহান। কোলা বাজারে কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে অনেকেই প্রতিদ্বন্দিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটি পক্ষ তাদের নানা ভাবে হুমকী দেওয়ায় তারা প্রার্থী হতে পারেননি। এমনকি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলে তার বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছেন। মেম্বার পদে যারা প্রতিদ্বন্দিতা করতে চেয়েছিলেন তাদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি মনোনয়নপত্র কেনায় পরদিনই বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এমনকি ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পরও মনোনয়নপত্র জমা দিতে যেতে পারেননি। উপজেলা পরিষদে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে পায়নি বলে অভিযোগ করেন।
ওই ইউনিয়নের বিএনপি’র সভাপতি মোঃ আক্কাচ আলী জানান, ভয় দেখিয়ে তাদের প্রার্থী হতে দেওয়া হয়নি। তিনি নিজেও একজন প্রার্থী ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, এ নির্বাচনে আসলে আওয়ামীলীগের পরাজয় হয়েছে। এভাবে প্রতিদ্বন্দি ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে সদস্য পদে একক প্রার্থী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোঃ মফিজ খাঁন বলেন, এভাবে জয়লাভ না করে ভোট হলে ভালো হতো। কিন্তু তারা সমঝোতা করে নিয়েছেন।
আরেক একক প্রার্থী মোঃ মোবারক হোসেন তরফদার বলেন ভোট হলে গোলামাল হয়, পক্ষ-বিপক্ষ তৈরী হয়। যে কারনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতা নির্বাচিত খারাপ না।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যাদ পদের একক প্রার্থী মোঃ মোদাচ্ছের হোসেন জানান, কাউকে ভয় দেখানো হয়নি। বিএনপি সমর্থীতরা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না ভেবে ভোটে আসেনি।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে কারা গিয়েছিলেন তা তিনি জানেন না, তবে বিষয়টি শুনেছেন। তিনি নিজেও নাকি মোহাম্মদ আলী সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি তাকে সহযোগিতা করবেন। এই শর্তে মোহাম্মদ আলী এবার তাকে (মোদাচ্ছের হোসেনকে) সহযোগিতা করছেন।
একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, তারা ভোট দিতে না পেরে হতাশ। ভোটাররা বলছেন, ভোটে প্রার্থী থাকবে, প্রচার-প্রচারনা চলবে। গ্রামের মোড়ে মোড়ে নির্বাচনী আড্ডা হবে, চায়ের দোকানে চলবে ভোটের আলোচনা। প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। তাদের সঙ্গে ভোটারদের পরিচিতি ঘটবে। এর কিছুই না থাকায় তারা হতাশ হয়েছেন।
মনিরুল ইসলাম নামের একজন প্রবীন ভোটার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, বাংলাদেশ হওয়ার পর অনেক ভোটে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে এ জাতীয় ভোট কখনও দেখেননি।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জামালপুর ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় একক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কি কারণে সেখানে প্রতিদ্বন্দিতা গড়ে ওঠেনি তা তো আমরা জানি না, কেউ অভিযোগও করেনি।