ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টা আগে ২০০০ সন্ত্রাসীর তালিকা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইমেইলে ও ইসির ইন্টারনাল সার্ভারে এ সব তালিকা মঙ্গলবার রাতেই পাঠানো হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নির্বাচনের মাঠের দুই হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসী ও ক্যাডার সক্রিয় রয়েছে বলে গত ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইসিতে তালিকা পাঠায়। তালিকাটির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়।
সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী এলাকায় বোমাবাজি, ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার পাশাপাশি কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটকেন্দ্রে বাধা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া সন্ত্রাসীরা সক্রিয় থাকলে নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা বৃদ্ধি হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, দুই হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫৬১, বিএনপির এক হাজার ১২১, জাতীয় পার্টির চারজন, জামায়াত শিবির ২১১, জেএসএসের ১০, পিসিপির একজন এবং অন্যান্য ১২১ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সক্রিয় এ সব সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা বা গডফাদার রয়েছে ৬৩৭ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২১১ জন, বিএনপির ৩১২ জন, জামায়াত-শিবিরের ৭৭ জন, পিসিপির একজন ও জেএসএসের একজন এবং অন্যান্য ৩৫ জন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব সামসুল আলম বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে এ ধরনের নির্দেশনা থাকলে অবশ্যই তালিকা ডিসি-এসপিদের কাছে পাঠানো হবে।
গত ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বৈঠকেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ক্যাডারদের ধরতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী বা ক্যাডারদের আটক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন সরকারবিরোধী সন্ত্রাসীরা বা ক্যাডার ও নেতাকর্মীরা যাতে কোনো কেন্দ্র দখল না করতে পারে সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এ ছাড়া ক্যাডার মদদদাতা গডফাদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও বলেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেন হামলার শিকার না হন সে জন্য তাদের বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করার সুপারিশও করা হয়েছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র প্রায় ৩৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এ নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে দলীয় আধিপত্য বিস্তার, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া দলগুলোর বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আন্তঃকোন্দলের কারণে সহিংসতার ঘটনাও ঘটতে পারে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ও অপরাধী ধরতে ২৮ ডিসেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া পুলিশ, এপিবিন, আনসার, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি পৌরসভায় একটি করে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে।
সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে ৫ জন (অস্ত্রসহ) ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কমপক্ষে ৬ জন (অস্ত্রসহ) পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া অস্ত্রসহ আরও দু’জন করে আনসার বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচনে র্যাবের ৮১টি টিম এবং ২২৯টি পৌরসভায় ১০২ প্লাটুন বিজিবি এবং ৬ উপকূলীয় পৌরভায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া মাঠে থাকছে ১ হাজার ২০৪ নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৮:২২ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
এমআরআর