ভূত দেখার মতোই চমকে উঠেছিলেন রমিজ উদ্দিন (৪৫)। পেশায় রিকশাচালক। চোখ তার রীতিমতো কপালে! সরাসরি মন্ত্রী কথা বলছেন তার সঙ্গে। তাও যে সে মন্ত্রী নন; ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য; সামলাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে যতটা কঠোর তিনি; মানুষ হিসেবে মন্ত্রীর ততটাই বিনয়ী আচরণ। এমনটি দেখে উবেই গেলো রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে নেওয়ার কষ্ট!
রমিজ উদ্দিন একা নন। তার মতোই ১শ’ ৭০ জন রিকশাচালক আর ৩০ অটোচালকের কপাল পুড়লো মন্ত্রীর ‘চুপিসার অভিযানে’।
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার ও আশুলিয়ায় অভিযানের জন্য শুক্রবার (০৬ মে) সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিকেই বেছে নেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর ছুটির আমেজে থাকা স্থানীয় প্রশাসনকেও ভিন্ন বার্তা দিয়ে গেলেন তিনি। কী সে বার্তা?
এক কথায়- সরকারি নির্দেশ তামিল করতে প্রশাসনের অলসতা আর মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটো ও রিকশাচলার সুযোগ দিয়ে মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া। সাধারণত মন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসন, নিজ দফতর আর সাংবাদিকদের বহর থাকলেও এদিন দৃশ্যত মন্ত্রী ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়ে চুপিসারেই নেমে পড়েন রাস্তায়। উদ্দেশ্য: ব্যাটারিচালিত অটো ও রিকশা থেকে মহাসড়ক কতটা মুক্ত তাই সরেজমিনে দেখা।
যে কারণে মন্ত্রীর সামনে-পেছনে ছিল না পুলিশ প্রটোকল, ছিল না অগ্রভাগে সাইরেন বাজানো কোনো গাড়ি। তবে এক নজর মন্ত্রী দর্শনেও ছুটে আসা- এতে সাধারণ মানুষদের ভিড়ে কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয় জটলার।
ক্যামেরা আর সাংবাদিকবিহীন অভিযানটিকেও অনেকের কাছে মনে হয় বাংলা সিনেমার স্যুটিংয়ের মতো!
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতোই জনতার অনেকেই পিছু নেন মন্ত্রীর। তবে মন্ত্রী বলে নন; জনতার চোখে বাস্তব পরিস্থিতি দেখতে এসেই হতবাক মন্ত্রী। দেখলেন সড়কে ব্যাটারিচালিত অটো আর রিকশা ফিরেছে আগেই মতোই।
প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় হারিয়ে গেছে সরকারি নির্দেশনা। শুরুটা হলো সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর থেকে। ব্যাটারি চালিত অটো আর রিকশা দেখে নিজেই সড়কে নেমে গেলেন।
কোনো উচ্চবাচ্য নয়, বিনয়ীভাবেই ব্যাটারি চালিত অটোর চালকদের মনে করিয়ে দিলেন মহাসড়কে চলাচলে ঝুঁকির কথা।
নির্দেশ দিলেন ব্যাটারি চালিত অটো আর রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে নেওয়ার। ততক্ষণে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ট্রাফিক পুলিশের বেতার যন্ত্রগুলো।
ব্যস্ত পুলিশ সদস্যরাও। স্যার আমি ‘ওমুক’, স্যার আমি ‘তমুক’। নিজের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। কারো কণ্ঠে আবার সাফাই!
কিন্তু চুপচাপ মন্ত্রী একের পর এক ব্যাটারি চালিত অটো আর রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যেমনটা থাকে মন্ত্রীর আগমন ঘিরে সাজানো-গোছানো।
এভাবে দুপুর পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়ার মহাসড়কে ওবায়দুল কাদেরের ঝটিকা অভিযানে ১শ’ ৭০টি রিকশা আর ৩০টি অটো থেকে খুলে নেওয়া হয় ব্যাটারি।
তিনি জানান, কদিন ধরেই কানে আসছিল মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটো আর রিকশা ফিরতে শুরু করেছে। বাস্তবতা দেখতে তাই চুপিসারেই বেরিয়ে পড়ি। আমি যখন কল্যাণপুরে তখন আমার গাড়ির চালকও জানতো না গন্তব্যটা কোথায়। গাবতলীতে আসার পর বললাম- সাভারে যেতে।
আগে থেকে সফরসূচি নির্ধারণ করা থাকলে সবকিছুই থাকে সাজানো-গোছানো। তখন কৃত্রিমতার আবেশটা বোঝা যায়। আজ আমি চেয়েছিলাম বাস্তবটা জানতে। এলাম, দেখলাম। এখানে নির্দেশনাগুলো কার্যকর নয়।
‘মূলত হেমায়েতপুর থেকে শুরু করি। আশুলিয়ায় অভিযানের শেষে জনতাই ছিল আমার শক্তি। তাদের সচেতনতাও জরুরি। আর বার্তাটা হচ্ছে, লোক দেখানো নয়। বাস্তবিক অর্থেই মহাসড়ককে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। সেটি অবশ্যই যাত্রী সুরক্ষার স্বার্থে’- যোগ করেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। (বাংলানিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ০৫:০০ পিএম, ১০ মে ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ