চাঁদপুর শহরের বেশ ক’টি জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে প্রতিদিন নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি না থাকায় যানজট ও যান চলাচলে বিড়ম্বনা তৈরি হচ্ছে।
দীর্ঘ ক’বছর ধরে চাঁদপুর শহরের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ রাখতে, কালীবাড়ি মোড়, শপথ চত্বর, বাসস্ট্যান্ট এবং ওয়্যারলেস মোড়ে প্রতিদিনই নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
এসব স্থান ছাড়াও চাঁদপুর শহরের আরো বেশ কিছু গুরত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে এবং নতুন সড়ক তৈরি করায় আরো স্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেগুলোতে প্রতিদিন নিয়মিত কোন ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। আর ওইসব স্থানগুলো হচ্ছে মিশন রোড ৪ রাস্তার মোড়, নতুন বাজার, চিত্রলেখার মোড়, পালবাজার ব্রীজের অভিমুখ, ট্রাকঘাট, ওয়ান মিনিট মোড়, ইলিশ চত্বর। শহরের এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি না থাকায় প্রায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায় এবং সেই সাথে প্রায়ই ঘটে ছোট, বড় অনেক দুর্ঘটনা।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে অতিরিক্ত যান চলাচলের কারনে মিশন রোডের চার রস্তার মোড় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চাঁদপুর শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ রাখতে অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের পাহারা থাকলেও মিশন রোড, নতুন বাজারসহ আরো কয়েকটি স্থানে শুধু বিশেষ দিন ছাড়া অন্যান্য সময়ে সেখানে কোন ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি লক্ষ্য করা যায়নি।
দেখা গেছে যে যখন কোন এমপি, মন্ত্রী কিংবা কোন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাঁদপুরে আগমন করেন তখন এসব স্থান গুলোতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদেরও উপস্থিতি হয়ে থাকে। যখন আবার আগত অতিথিরা চাঁদপুর ত্যাগ করেন তারপর সে স্থানগুলো ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি শূন্য হয়ে পড়ে।
আর নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশ না থাকার কারনে ট্রাক, বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, রিক্সা, অটোবাইক ও মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন যে যার ইচ্ছেমতো বেপরোয়া চালাচ্ছেন। এলোমেলো ভাবে গাড়ি চালানোর কারনে তখন শহর জুড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট লেগে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রী সাধারণের।
বিশেষ করে মিশন রোডের মোড়, নতুন বাজার এবং পালবাজার ব্রীজের অভিমুখ ,এ তিনটি স্থানে নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি না থাকায় প্রায়ই এসব স্থানগুলোতে বিভিন্ন যানবাহন একটির সাথে আরেকটির সংঘর্ষ বেধে দুর্ঘটনা ও যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে।তবে বেশি ঝুকিপূর্ণ মিশন রোড এলাকাটি। এ স্থানে চারটি রাস্তা সংযুক্ত হওয়ায় চারদিকের যানবাহন গুলো এখানে আসার পর ট্রাপিক পুলিশের উপস্থিতি না থাকার কারনে অনেক জটলা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
চাঁদপুরে দিনদিনই বিভিন্ন যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে কিন্তু সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়েনি ট্রাফিক পুলিশের সদস্য সংখ্যা।
এদিকে খবর নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুরের টিআই দেলোয়ার হোসেন বদলী হওয়ার পর চাঁদপুর সদর ট্রাফিক বিভাগের টি আই হিসেবে নাসির উদ্দিন ভ‚ঁইয়া যোগদান করেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ট্রাফিক বিভাগের সুসৃঙ্খল কর্মকান্ড অনেকটা বৃদ্ধি পায়।
অনেক ট্রাফিক সদস্য জানান, বর্তমান টি আই নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া তার নিজের প্রচেষ্টায় চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে যানজট ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রনে রাখতে অত্যান্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভাবে ট্রাফিক সদস্যদের পরিচালনা করছেন। গত ১০ নভেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ২দিনের সফরে চাঁদপুর আসলে তখনো তিনি শহরের যানজট নিয়ন্ত্রনে রাখেন এবং বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করেন।
এভাবেই তিনি এখন তার মেধা বুদ্ধি দিয়ে চাঁদপুরের ট্রাফিক বিভাগ পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু লোকবল সংকটের কারনে চাঁদপুর শহরের এসব গুরুত্বপূর্নস্থানে ট্রাফিক দেয়া সম্ভব হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায় চাঁদপুর সদর ট্রাফিক বিভাগে ৬ জন সার্জেন্ট পদের মধ্যে নিয়োগ রয়েছে মাত্র ২ জন। টি এস আই৭ জনের মধ্যে রয়েছে ৩ জন, এ টি এস আই আছেন মোট ৫ জন এবং কনস্টেবল রয়েছে মাত্র ২২ জন। চাঁদপুর শহরের সব ক’টি স্থানে নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি দিতে হলে যে পরিমান লোকবলের প্রয়োজন দেখা গেছে সে পরিমান লোকবল নেই।
চাঁদপুর সদর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) নাসির উদ্দিন ভ‚ঁইয়া চাঁদপুর টাইমসকে জানান, চাঁদপুর শহরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অটোবাইক রয়েছে। এসব মাত্রাতোরিক্ত অটোবাইক বেপরোয়া ভাবে চালনা করে শহরের বিভিন্নস্থানে অনেক যানজটের সৃষ্টি করে।
চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লোকবল সংকটের কারণে সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের টহল ফোর্স দেয়া সম্ভব হয়নি। আমি জেনেছি এ বিষয়ে এসপি স্যারের মাধ্যমে বেশ ক’বার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু তাতেও এ সংকট কাটেনি।’
তিনি আরো জানান, ‘চাঁদপুর শহরে যে পরিমাণ ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজন সে পরিমাণ ট্রাফিক সদস্য নেই। যেখানে চাঁদপুর শহরে অন্তত ৪০/৫০ জন ট্রাফিক সদস্যের দরকার। সেখানে রয়েছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ জন ।
এরইমধ্যে ১১ জনই হাজীগঞ্জ দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি যারা চাঁদপুর সদরে রয়েছেন দেখা গেছে যে এদের মধ্যে কেউ ছুটিতে থাকে আবার কেউ অসুস্থ থাকেন। এজন্য চাঁদপুর শহরের সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আবারো এসপি স্যারকে বিষয়টি অবগত করে তার মাধ্যমে পুনরায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ট্রাফিক বিভাগে লোকবল বাড়ানোর জন্য লিখিত আবেদন করবো।
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:৪০ পিএম,২৭ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur