বিশেষ সংবাদ

ভূতের বাড়িতে সবই আছে, নেই শুধু দু’বোন

বাড়ির মেইন গেটের সামনে দুটি তালাবদ্ধ টং দোকান বসানো। গেটের ভেতর-বাইরে দুদিকেই তালা ঝুঁলছে। পা দুটো উঁচু করে ভেতরের দিকে তাকালে চোখে পরে নীল টিন শেড ঘর।

দীর্ঘদিন রং না করায় টিনের মাঝে ছিদ্র হয়ে গেছে। বাড়ির সীমানার ভেতরে আম-খেজুরসহ নানা ধরনের কয়েকটি গাছ দেখা যাচ্ছে। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের প্রথম বাড়ি এটি। বাড়ির ভেতরে আগের মতো সবই থেকে গেছে, নেই শুধু দুই বোন রিতা আর মিতা।

২০০৫ সালে মা’র মরদেহ বাড়িতে দাফনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডা. আইনুন নাহার (রিতা) ও প্রকৌশলী নুরুন্নাহারের (মিতা) অস্বাভাবিক জীবনযাপনের বিষয়টি জানাজানি হয়।

পেশায় মিতা ইঞ্জিনিয়ার আরেক রিতা চিকিৎসক ছিলেন। ২০১০ সালে তাদের মানসিক চিকিৎসা করে বড় বোন কামরুন্নাহার হেনার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তবে সর্বশেষ ২০১৩ সালে বগুড়ার একটি হোটেল থেকে তাদের উদ্ধার করে জেলার সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়।

তাদের মিরপুরের ‘ভূতের বাড়ি’টি এখনও খালি। সরেজমিন বাড়ি ঘুরে দেখা গেল, বাইরের গেটের পাশেই ঝুঁলছে রিতার চেম্বারের একটি বোর্ড। এই বাড়ির ভেতরেই ছিল রিতার চেম্বার। সেখানে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গাইনি রোগীদের দেখতেন রিতা।

চারদিকে বাউন্ডারি দেওয়া বাড়িটির ভেতরে আম আর খেজুর গাছ দেখা গেল। বাড়ির সামনের দিকে একটি ফার্নিচারের দোকান (উডল্যান্ড ডোরস অ্যান্ড ফার্নিচার), আরেকটি চায়ের দোকান। দুই পাশে দুটি বহুতল ভবন। উত্তর দিকে বাউন্ডারির বাইরে ৪ ফুট অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া।

১২ বছর ধরে রিতা-মিতার বাড়ির পাশেই রিক্সা মেরামতের যন্ত্রপাতি নিয়ে বসেন জুবেইদা বেগম। রিতা-মিতাকে দীর্ঘদিন দেখেছেন তিনি। জীবিত থাকতে তাদের মাকেও দেখেছেন।

তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে জুবেইদা বেগম বলেন, দুজন সবসময় বোরকা পরতো। কারো সঙ্গে কথা বলতো না। দিনের বেলায় কখনোই বের হত না। মা মারা যাওয়ার পর মাঝে মাঝে বোরকা পরে বাজার করতে যেত।

মো. সোহেল নামে ওই গলির এক বাসিন্দা বলেন, আমরা যখন রাতে রাস্তায় আড্ডা দিতাম তখন তাদের বের হতে দেখতাম। দুজন ১১টার পর গলিতে হাঁটতে বের হত। অনেকদিন ১২টার সময় দেখেছি।

রিতা-মিতার বাড়ির নিচে উডল্যান্ড ডোরস অ্যান্ড ফার্নিচার নামে একটি দোকান রয়েছে। রিতা-মিতার বড় বোন হেনা এই দোকানের ভাড়া নেন। বাড়ির গেটের সামনে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করা এক চা দোকানি বললেন, বড় বোন ধানমন্ডিতে থাকেন।

প্রায়ই এখানে এসে বাড়িটি দেখে যান। আমাদের দেখেশুনে রাখতে বলেন। সর্বশেষ রমজান মাসে এসেছিলেন। বলছিলেন ‘ভূতের বাড়ি’ ভেঙে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু করবেন।

ভূতের বাড়ি ‘নামকরণ’

মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ৯ নম্বর রোডের বাসিন্দারা জানান, রিতা-মিতার কিছু অস্বাভাবিক কার্যক্রম তার মায়ের মৃত্যু নিয়ে অদ্ভুত গল্পের কারণে বাড়িটি এলাকায় ভূতের বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়।

মো. সোহেল নামে এক বাসিন্দা জানান, যখন রিতা-মিতার মা মারা যান, তখন তারা কাউকে না বলে বাড়ির উঠানে মাকে কবর দেওয়ার প্রস্তুতি নেন। বাড়ির খেজুর গাছের নিচে একটি কবরও খোঁড়েন তারা। স্থানীয়রা অন্য বাড়ির ছাদ থেকে এই দৃশ্য দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে তার মায়ের মরদেহ মিরপুরের জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানে দাফন করে।

দাফনের কয়েকদিন পর থেকেই মেয়েরা বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করতো না, কথাও বলতো না। মাঝে মাঝে তাদের গাছের আম পাড়তে কেই গেলে বকাঝকা করতো, এই যা।

এলাকার অনেকেই নাকি তার মৃত মাকে হাঁটাচলা করতে দেখেছে। বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখেছে। এরপর থেকেই নাম হয়েছে ভূতের বাড়ি। ভূতের বাড়ি বললেই মিরপুরের সবাই এই বাড়ি চেনে।(জাগোনিউজ)

<strong> নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময়  ৬:৩৯ পিএম, ১৭ অক্টোবর  ২০১৬, সোমবার

এইউ </strong>

Share