নগরীর জিইসি মোড়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত পুলিশ সুপার বাবুল অাক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার মিশনে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটির নম্বর প্লেটটি ছিল ভুয়া। এই নম্বরের প্রকৃত মালিকের কাছে তার মোটর সাইকেলটি নিজ হেফাজতেই রয়েছে। তবে উদ্ধার হওয়া গাড়ির চেচিস ও ইঞ্জিন নম্বর থেকে এর প্রকৃত মালিককে খুজে বের করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
রাতেই তাকে নিজ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ। নগরীর জামালখান এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন নামে ওই ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি ২০১১ সালে এক দালালের মাধ্যমে মোটরসাইকেলটি ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর তিনি গাড়িটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তিনি বিআরটিএকে জানায়নি, যে কারণে আইনগতভাবে এই মোটর সাইকেলের মালিক এখনও দেলোয়ার। সে কারণে প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডে দেলোয়ারের কোনও সম্পৃক্ততা আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
রোববার রাতে শুলকবহরের বড় গ্যারেজ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পুলিশের উদ্ধার করা মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটে রয়েছে ‘চট্ট মেট্রো-ল-১২-৯৮০৭’ বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য মতে, এই নম্বরের গাড়ির মালিক মো. আবদুর রহিম। পিতা-মৃত সৈয়দ আহমেদ। ঠিকানা-১৮/১৯ টেরিবাজার, সিটি টাওয়ার, চট্টগ্রাম। ২০১৪ সালে মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন করা হয়।
অথচ টেরি বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী আবদুর রহিম জানিয়েছেন, এই নম্বরের গাড়িটি তার কাছেই রয়েছে। পুলিশও সেই প্রমাণ পেয়েছে এবং তার কাছে থাকা গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিনের সঙ্গে পুলিশের উদ্ধার করা মোটরসাইকেলের কোনও মিল নেই। উদ্ধার করা গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর (আইপি ৫০ এফএমজি-২-এ-১২৯৯৪৬৫) এবং চেসিস নম্বর হলো (বিআরবিএই-১০১০০০০৪২)।
বিআরটিএ নিবন্ধন অনুযায়ী মোটরসাইকেলটি নম্বর হচ্ছে চট্ট মেট্রো-হ-১৩-১৫৯৭। অথচ ঘটনার দিন দুর্বৃত্তরা গাড়িটিতে (চট্ট মেট্রো-ল-১২-৯৮০৭) নম্বর প্লেট ব্যবহার করেছিল। সেই গাড়ির আসল মালিক আব্দুর রহীম বলছেন, তার গাড়ির নম্বর লাগিয়ে এই হত্যাকাণ্ড করা হয়েছে।
বিআরটিএ নিবন্ধন অনুযায়ী চট্ট মেট্রো-হ-১৩-১৫৯৭ নম্বরের মোটরসাইকেলটির মালিক নগরের জামাল খান এলাকার মৃত গোলাম শরীফের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন। ২০১০ সালে গাড়িটি নিবন্ধন করা হয়।
আর দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, ২০১১ সালে এক দালালের মাধ্যমে তিনি মোটরসাইকেলটি ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর তিনি গাড়িটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
কিন্তু চট্টগ্রাম কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল করিম বলেছেন, পুলিশের উদ্ধার করা মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেটের সঙ্গে ইঞ্জিন চেসিস নম্বরের মিল নেই। অন্য একটি গাড়ি নম্বর এতে লাগানো হয়েছে। নম্বর প্লেট ভুয়া হলেও গাড়ির ইঞ্জিন চেসিস নম্বর দিয়ে প্রকৃত মালিকানা যাচাই-বাছাই করা যায়। সেই হিসাবে উদ্ধার হওয়া গাড়ির মালিক জামাল খান এলাকার দেলোয়ার হোসেনই।
আবদুল করিম আরও বলেন, মোটরযান আইন অনুযায়ী মালিকানা হস্তান্তরের ৩০ দিনের মধ্যে ক্রেতাকে মালিকানা পরিবর্তনের জন্য এবং বিক্রেতাকে ১৪ দিনের মধ্যে তা বিআরটিএকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। মালিকানা হস্তান্তরের পর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ তা না করে থাকলে প্রথমে গাড়িটি যাঁর নামে নিবন্ধন হয়েছে, তাঁর নামই থাকবে বিআরটিএ নথিতে।
আর এই কারণেই বিষটি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন, সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার। তিনি বলেছেন, আইন না মানাটা অপরাধ। কেন বিক্রির পর বিক্রেতা বিষয়টি বিআরটিএকে জানাননি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত নয় মাসে জঙ্গিদের আস্তানা থেকে নিবন্ধনহীন দুটি মোটরসাইকেল ও একটি ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার করে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রসঙ্গত, রোববার (৫ জুন) সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় সোমবার দুপুরে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বাবুল অাক্তার।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:৩০ পিএম, ৭ জুন ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ