ফরিদগঞ্জ

ভিক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে দেখি ঘরে তালা,অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে খুলল

স্বামী মারা গেছেন বহু বছর পূর্বে। নেই কোন সম্পত্তি। সংসার চালানোর মতো কোন কিছুই নেই। তাই ভিক্ষা করেই একামাত্র মেয়েকে নিয়ে বেঁচে রয়েছেন। থাকার মতো কিছু নেই দেখে স্বামীর বাড়ির কাচারী ঘরেই দিনাতিপাত করতেন। কিন্তু হঠাৎ মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা হয়েছে তার।

ভিক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন সেই থাকার ঘরে তালা! এমন অবস্থা দেখে বৃদ্ধা ভিক্ষুক মনোয়ারা বেগম (৬০) দু’চোখ বেয়ে পানির স্রোত বইতে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, বাড়ির লোকজন একত্রিত হয়ে ওই ঘরে তালা মেরে দেয়। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই থানার ওসি মোহাম্মদ শহীদ হোসেন ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তালাবদ্ধ ঘরের তালা খুলে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে ঘরে ঢুকার সুযোগ করে দিলেন।

ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ১১ নং চরদু:খিয়া পূর্ব ইউনিয়নে।

জানা গেছে, ১১ নং চরদু:খিয়া পূর্ব ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সন্তোষপুর গ্রামের আইনউদ্দীন বেপারী বাড়ি প্রকাশ চটকি বাড়ির সহায়সম্বলহীন মৃত মহর আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম তার এক কন্যা রিনা বেগমকে নিয়ে ওই বাড়ির কাচারী ঘরে থাকেন। জীবন জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিতে বাধ্য হন তিনি।

বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি পেটের দায়ে ভিক্ষা করতে বাহিরে ছিলাম। অপরদিকে আমার মেয়ে রিনা চুলোয় ভাত বসিয়ে সে কিছু সময়ের জন্য বাহিরে ছিল। এমন সুযোগে গত মঙ্গলবার ওই ঘরটিতে তালা মেরে দেয় বাড়ির লোকজন। আমার স্বামীর পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ২শতক। ওই সম্পত্তির ভাগিদার আবার বহুলোকজন। ফলে বাস্তুহারা হিসেবে আমি গত ৪ বছর ধরে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ওই ঘরে থাকছি।

কিন্তু বাড়ির লোকজন একত্রিত হয়ে মনোয়ারা বেগমকে ওই ঘর থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । সেই মতে মনোয়ারা বেগমের অনুপস্থিতে ওই বসতঘরে তালা মেরে দেয় একই বাড়ির বাসিন্দা প্রবাসী শাহআলমের স্ত্রী মনি বেগম ও তার সহযোগীরা।

এ বিষয়ে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের মেয়ে রিনা বেগম বাদী হয়ে মনি বেগমকে প্রধান আসামি করে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে অভিযোগের বিষয়ে মনি বেগম বলেন, ঘরটি যেহেতু ইজমালি অথার্ৎ বাড়ির সকলের। বাড়ির সবাই মনোয়ারা বেগমের অসহায়ত্বের কারণে ৪ বছর এই ইজমালি ঘরটিতে থাকতে দিয়েছে। তাকে বহুবার বলা হয়েছে এই বাড়িতে তার স্বামীর জায়গা থাকলে তাতে ঘর করে থাকার জন্য।

এলাকার ইউপি মেম্বার বাচ্চু জানান, অসহায় মনোয়ারা বেগমের অনুপস্থিতে ঘরটিতে তালা মারার খবর পেয়েছি। তবে যারা ঘরে তালা মেরেছে তারা আসলে আমার কথা শুনবে না, মনে করে কোন ব্যবস্থা নিতে পারি নি।

উক্ত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তাৎক্ষনিক ভাবে পুলিশ তালাবদ্ধ ঘরের তালা খুলে মনোয়ারা বেগমকে ঘরের থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

প্রতিবেদকঃশিমুল হাছান,৭ জানুয়ারি ২০২১

Share