চাঁদপুর

‘ভিক্ষা করতে আমার ভালা লাগে না আর এই কাম করুম না’

‘মাইনসের দ্বারে গিয়া ভিক্ষা করতে আমার আর ভালা লাগে না, শরীলে আর দেয় না, আইজ আমনেরা আমগোরে সাহাইয্য দিছেন, আইজকাত্যন (আজ থেকে) আর ভিক্ষা করুম না’।

বুধবার (৯ মে) চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শত শত দর্শক আর মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিদের সামনে মাইক্রোফোনে দাঁড়িয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন একজন বৃদ্ধা নারী ভিক্ষুক রহিমা বেগম।

এতোদিন চাঁদপুর শহরের বিবিন্ন পাড়া-মহল্লা কিংবা গ্রামের আনাচে-কানাচে ভিক্ষা করে যিনি জীবীকা নির্বাহ করতেন। সদ্য ভিক্ষা-বিত্তি ছেঁড়ে দেয়া এ নারী আনন্দে আত্মহারা হয়ে অত্যান্ত হাস্যজ্জল ও সাবলিল ভাষায় আরো বললেন, ‘দশ বছর ধইরা সকার আমারে সহযোগিতা করছে। ১৫ কেজি চাইল আর ৫শ’ টিয়া কইরা দিছে। অহনে সরকারেরতনও দিবো ডিসিও দিবো, আইজকেরতন আর ভুল করতাম না, আর ভিক্ষা করতাম না’।

জীবন-জীবীকার একটু নিশ্চয়তা পাওয়া অসহায় এই বৃদ্ধা নারীর বক্তব্য শুনে মঞ্চে বসা চাঁদপুর সদর আসনের এমপি ডা. দীপু মনি এমপি, জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানসহ সকল অতিথি ও উপস্থিত সকলের দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।

এদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চাঁদপুরকে ভিক্ষুক মুক্ত করণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৯মে সদর উপজেলার চার ইউনিয়নকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়। ওইদিন চারটি ইউনিয়নের ১৫০জন ভিক্ষুককে পুর্নবাসন করে তাদের হাতে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীসহ বিভিন্ন সহযোগিতা তুলে দেয়া হয়। আর এই কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান।

তিনি নিজে পায়ে হেঁটে পরিচয় গোপন রেখে ভিক্ষুকদের তালিকা তৈরি করছেন। শুধু তাই নয় তিনি অসহায়, দারিদ্র ও অসচ্ছল ব্যাক্তিদের নানান ভাবে সহযোগিতা করছেন।

জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগ সফল হলে চাঁদপুর হবে বাংলাদেশের প্রথম ভিক্ষুক মুক্ত জেলা। আর সেটি সহসাই সম্ভব হবে বলে মনে করে সচেতন জেলাবাসী।

প্রসঙ্গত, ব্যান্ডিং জেলা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের রূপকার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল জেলার সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ড গঠন করেন। এ ফান্ডে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ১ শ’ টাকা রেখে যান।

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম

Share