ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনে দু’পক্ষই নাখোশ

ধর্মভিত্তিক কিছু সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণের গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে অপসারণ করা হয়।

পরে বাম সংগঠন ও সাংস্কৃতিককর্মীরা আন্দোলনে নামে। তারা হেফাজতের সঙ্গে আপসের অভিযোগ তুলে সরকারের সমালোচনা করে আসছিল।

এই সমালোচনার মধ্যে গত শনিবার (২৭ মে) মধ্যরাতে ভাস্কর্যটি সুপ্রিমকোর্টের বর্ধিত অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়।

অপসারণের পরে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেও পুনঃস্থাপনের পরে হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো আন্দোলনের হুশিয়ারি দিচ্ছে। ভাস্কর্য অপসারণ ও পুনঃস্থাপনে উভয় পক্ষই সরকারের ওপর নাখোশ হয়েছে।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এ বিষয়ে বলেন, সব ভাস্কর্য রক্ষা করুন। ভাস্কর্যকে উপলক্ষ করে হেফাজতি তেঁতুল হুজুর চক্রের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জিগির তোলার চক্রান্ত কঠোরভাবে প্রতিহত করুন।

সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারী হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যে কোনো রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্টতা আত্মঘাতী হবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমরা একটা ঘোরের মধ্যে আছি। এই ভাস্কর্য অপসারণ করা হচ্ছে। এবার পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে।

কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট এর কোনো কারণ ব্যাখ্যা করছেন না। তিনি আরও বলেন, আজ তিনদিন হয়ে গেল কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার কিংবা দায়িত্বরত কেউ একটা প্রেস রিলিজ পর্যন্ত দিলেন না। কেন?

ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনে হেফাজতের প্রতিবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, শুধু হেফাজত নয়, অসাম্প্রদায়িক চেতনাবিরোধীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। এ লড়াই আমাদের অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তাদের সঙ্গে কোনো আপস নয়।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিকভাবে এদেশের দলগুলো যে এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে, তারই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অপরাজেয় শক্তির রাজনৈতিক দল কীভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে মাথানত করে! যে অপশক্তিকে আমরা ১৯৭১ সালে রুখে দিয়েছি, সেই অপশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না।

এদিকে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনকে অত্যন্ত হতাশাজনক উল্লেখ করে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী এক বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেবী থেমিসের ভাস্কর্য অপসারিত হয়েছে জেনে অসুস্থ শরীরেও আনন্দ পেয়েছিলাম এবং দেশবাসীর সঙ্গে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছিলাম। কিন্তু মাত্র দুদিনের মাথায় যখন দেশবাসী রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, প্রথম রোজার তারাবিহ আদায় করে প্রশান্তচিত্তে ঘরে ফিরছিল, তখনই দেশবাসীর সঙ্গে আমিও জানতে পারলাম থেমিস সুপ্রিমকোর্টের অ্যানেক্স ভবনে পুনঃস্থাপিত হয়েছে। এমন সংবাদে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরা বিস্মিত হতবাক এবং বাগ্রুদ্ধ। থেমিসের পুনঃস্থাপন এটাই প্রমাণ করে, এদেশের মানুষের সম্মিলিত আকাক্সক্ষাকে সরকার বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছে না।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘এটা পুনঃস্থাপন করা উচিত হয়নি। যে কারণে এটি সরানো হয়েছে, একই কারণ বিদ্যমান। আমরা বলে আসছি, মুসলিম সংস্কৃতিতে মূর্তি পূজার প্রচলন নেই।

নেজামী বলেন, ‘সংঘাতটা শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেটা জিইয়ে রাখা হলো।’

গত ফেব্রুয়ারিতে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী এক বিবৃতিতে বলেন, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আদর্শিক চেতনার একেবারেই বিপরীত। অবিলম্বে এটি অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় ইমান, আকিদা ও ঐতিহ্য রক্ষায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভাস্কর্যটিকে ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি’ আখ্যায়িত করে তা অপসারণের দাবিতে প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমি মাদ্রাসার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এক সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিত নয়। আমি আপনাদের বলব, আপনারা ধৈর্য ধরেন। এটা নিয়ে কোনো হইচই নয়। একটা কিছু যখন করে ফেলেছে, সেটাকে আমাদের সরাতে হবে। সেটার জন্য আপনারা একটুকু ভরসা অন্তত রাখবেন যে, এ বিষয়ে যা যা করার আমি তা করব। ভাস্কর্য অপসারণের পক্ষে যুক্তি হিসেবে এর নান্দনিক ‘ত্রুটির’ পাশাপাশি জাতীয় ঈদগাহের কাছে অবস্থানের কথা বলেন তিনি।

হেফাজতের সে দাবি অনুসারে রমজান শুরুর দুদিন আগেই অপসারণ করা হয় ভাস্কর্যটি। আবার পহেলা রমজান রাতেই তা পুনঃস্থাপন করা হয়। (দৈনিক আমাদের সময়)

নিউজ ডেস্ক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২ : ৪০ এএম, ২৯ মে ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ

Share