যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকার প্রবাহমান নদীর উপর একের পর এক সেতু নির্মাণ করছে। ফলে শুধু দুই পাড়ের নয়, সেতু সংযোগকারী সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা উপকৃত হয়। উন্নয়ন হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক গতিধারা। কিন্তু নির্মানাধীন সেতুটির যদি কাজ অসম্পন্ন অবস্থায় থাকে। তাহলে দেখা যায় উল্টোচিত্র। মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
যেমনটি হয়েছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর উপর ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুর ক্ষেত্রে। গত ৫ বছরেও সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেতুর সুফল পাচ্ছে না দুই পাড়ের লক্ষাধিক মানুষ। সাধারণ মানুষের অভিযোগ ঠিকাদারের অবহেলার কারণে নির্মাণকাজে ধীরগতি।
জানা গেছে, এককালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীর উপর ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পুর্ব ইউনিয়নের চররনবলিয়া গ্রাম ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বগার গুদাড়া এলাকা দিয়ে ২৭৭ মিটার দীর্ঘ ভাষাবীর এম এম ওয়াদুদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যে দিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
দুই সংসদীয় আসনের এমপি ডা: দীপু মনি ও ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া যৌথ ভাবে সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নবারণ টেড্রার্স লি. সেতুটির মূলকাজ নদীর উপরের কাজটি সম্পন্ন করে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ২৮ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) যৌথ ভাবে কাজ শুরু করে। নির্মাণকাজের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২১ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা জুন’২০২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
সরেজমিন সেতুর নির্মাণকাজ এলাকায় গেলে দেখা যায়, সেতুর ফরিদগঞ্জ উপজেলা অংশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ৬ জন শ্রমিক সেতুর ডায়াফাক্টের পিয়ারের ক্যাপের কাজ করছে। অপর পাড়ের পিয়ারের ক্যাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট প্রকৌশলী কামরুল হাসান।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট প্রকৌশলী কামরুল হাসান জানান, সেতুর দুই পাড়েই নির্মাণ কাজ চলছে। চাঁদপুর সদর অংশে ২৫জন এবং ফরিদগঞ্জ অংশে ৯জন শ্রমিক কাজ করছে। তবে কাজের উপর শ্রমিক বাড়ে ও কমে।
এদিকে বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আকবর মিয়াজী, চররনবলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন (৩৮), খোরশেদ আলম (৬০), জুয়েল হোসেন টিটু (৩৫), আলাউদ্দিন (৩৪), মিজানুর রহমান (৬০), শফিকুর রহমান (৭০)সহ বেশ কয়েকজন জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি যে ভাবে কাজ করছে মনে হয় আগামী দু’ তিন বছরেও কাজ শেষ হবে না। কাজের ধীরগতি ও শ্রমিক কম দিয়ে কাজ করানোর কারণে ডায়াফাক্টের পিয়ারের ক্যাপের রডে মরিচা ধরছে। ঠিকমত এখানে নির্মাণ সামগ্রীও আনা হয় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও আর্থিক সমৃদ্ধি সুবিধার জন্য এই ব্রিজটি আমাদের উপহার দিয়েছেন। কিন্তু এর সুবিধা আমরা কবে ভোগ করতে পারবো কিনা তা জানিনা।
বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধীরলয়ে কাজ করছে। বিষয়টি এলজিইডি চাঁদপুর অফিসকে জানানো হয়েছে। কার্যত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা তারা।
এ ব্যাপারে এলজিইডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুস হোসেন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ডিসেম্বর’২০২১ সালে মেয়াদ শেষ হয়।
পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে জুন’২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা ডিসেম্বর’২০২২ এর মধ্যে কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার আশা করছি। তবে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আমরা সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবো। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ কাজে সামান্য ধীরগতি থাকলেও বর্তমানে গতি ফিরেছে।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুর-হাইমচর আসনের এম পি ও শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনির পিতা ভাষা সৈনিক মরহুম এম.এ ওয়াদুদের নামানুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৩০ জুন ২০২২