-Feb 22, 2015 @ 05 : 12
লাইফস্টাইল প্রতিবেদক:
কথায় আছে পুরুষ দুই প্রকার। জীবিত ও বিবাহিত। এই কথাটির সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে। কেননা বিয়ের পরে স্বামীরা কি মরে যায়? নাকি নতুন জীবন পায়? আমার তো মনে হয়, পুরুষের আসল জীবন শুরু হয় বিয়ের পরে। একটি সুন্দর-সুখী এবং গোছানো জীবন হতে পারে যদি তিনি উপযুক্ত কাউকে জীবনসঙ্গী করতে পারেন। তাই বিয়ে করা মানে একজন পুরুষের ‘মৃত্যু’, এটা কোনোভাবেই সত্য নয়।
এখন আসি বিয়ের পরে কী করে ভালো স্বামী হওয়া যায়—সে বিষয়ে। আমরা যেমন আশা করি একটা ভালো বউ পাওয়ার, তেমনি বউরাও তো আশা করেন ভালো স্বামী পাওয়ার। বিয়ের পরে বউয়ের কথা সব সময় শুনলে এবং বউয়ের কথায় ওঠাবসা করলেই কেবল ভালো স্বামী হওয়া যাবে, এ ধারণাও সঠিক নয়। ভালো স্বামী হওয়ার জন্য এমনটা হওয়ার দরকার নেই। কারণ, ভালো স্বামী হয়ে থাকার দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা আমার আছে। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বউয়ের কথায় উঠবস করা মোটেই ভালো স্বামীর লক্ষণ নয়। এটা ‘গৃহপালিত’ স্বামী হওয়ার লক্ষণ। মজার ব্যাপার হলো, ভালো স্বামী হওয়া কিন্তু সহজ ব্যাপার না। এটার জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হয়।
এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, বিয়ের পর স্ত্রী তাঁর সবকিছু ছেড়ে নতুন একটি পরিবারে যোগ দেন। তাঁর নিজের ঘর, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এমনকি প্রতিদিনের অভ্যাসও ত্যাগ করতে হয়। উল্টোদিকে নতুন বরকে কিছুই ছাড়তে হয় না। না পরিবার, না আত্মীয়স্বজন। তাই স্ত্রীর মানিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার আছে। সে জন্য স্ত্রীর দিকে সবার আগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে স্বামীকেই। শুধু তা-ই নয়, প্রথম দিকে সব ছেড়ে আসার কষ্টটা যেন সে টের না পায় এ জন্য তাকে মানসিক সহযোগিতাটুকু স্বামীকেই দিতে হবে। এখানেই শেষ নয়, স্বামীকে নিজের পরিবার দেখার পাশাপাশি স্ত্রীর বাবা-মার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে স্ত্রী খুশি হবে। আর শ্বশুর-শাশুড়ির দিকে খেয়াল রাখাটা স্বামীর জন্য এমন কঠিন বা দুঃসাধ্য কাজ না।
সংসার শুরু করার পর একজনকে আরেকজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। শুধু স্বামী-স্ত্রী কেন, যেকোনো সস্পর্কের মধ্যে শ্রদ্ধা না থাকলে সমস্যা দেখা দেবেই। স্বামী-স্ত্রী মানেই একটা শ্রদ্ধাহীন সম্পর্ক, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
একই সঙ্গে সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে বউয়ের মতামত নেওয়াটা জরুরি। কারণ, সংসার চালানো সহজ ব্যাপার নয়। এটা যথেষ্ট শ্রমসাধ্য এবং কঠিন কাজ। আমরা যতই মেয়েদের বাড়ির কাজগুলো সহজ ভাবি তা আদতে সহজ নয়। আর কোনো কারণে যদি স্ত্রীর মতামত পছন্দ না হয় তাহলে তাঁকে বুঝিয়ে বলাই ভালো। আশা করছি বুঝিয়ে বললে যেকোনো স্ত্রীই বুঝবে। আমার স্ত্রীর মতো।
আর দিনের শেষে বা সপ্তাহে অথবা মাসে স্বামীর উচিত হবে একান্তে স্ত্রীকে কিছুটা সময় দেওয়া। এটি একেকজন একেকভাবে নিজের মতো করে দেবেন। এটা স্ত্রীর পাওনা কিন্তু! কারণ দিনের কাজ শেষে তিনিও আশা করেন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে একান্তে কিছুটা সময় কাটাতে। শুধু তা-ই নয়, আমি মনে করি মাসে বা বছরে অন্তত একবার হলেও স্ত্রী বা পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাইরে কোথায় ঘুরতে যাওয়া উচিত।
আর হ্যাঁ, ঝগড়ার ব্যাপারে আমার দু-একটি কথা আছে। সুখী-সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য ঝগড়া খুব জরুরি। কারণ, ঝগড়া হলে সম্পর্কে ভালোবাসার মাত্রাটা বেড়ে যায়। ঝগড়ার পরে একে অপরের প্রতি টান তৈরি হয়। মোটকথা ভালোবাসা বেড়ে যায় অনেকখানি।
ভালো স্বামী হওয়ার জন্য এখন আমি দুটি টিপস দিই। একটি হলো, স্বামীদের ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা। এটা হতেই হবে, এটা করতেই হবে এ ধরনের চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। না হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা দেখা দেবে। আরেকটা হলো ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। মানে সব ধরনের সম্পর্কের দিকে খেয়াল রেখে সমন্বয় করে চলতে হবে। বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চললে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেবে না।
পরিশেষে একটা প্রবাদ মনে করিয়ে দিই, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।’ প্রবাদটা ঠিক তবে এটাও সত্যি, যদি গুণবান পতি থাকে তাঁর সনে। অর্থাৎ শুধু একজনের গুণে একটা সংসার সুখের হয় না। স্বামীরও অবদান থাকতে হয়। একজন ভালো স্বামীর সেই অবদান রাখার গুণটি থাকেই।