২০০৯ সাল থেকে তানজিলা হক মিতুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের। দীর্ঘ প্রেমের ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবেই মিতুর সাথে ডা. আকাশের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ইউএসএ চলে যান মিতু। ইউএসএ থাকাকালীন থেকেই মিতুর সাথে বিবাহবহির্ভূত একাধিক সম্পর্ক নিয়ে ডা. আকাশের দাম্পত্য কলহ চলছিল। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন মিতু।
এরপর দুইজনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ আরো প্রকট হয়ে উঠে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতভর আকাশের চাঁদগাও আবাসিক এলাকার বাসায় মিতু ও আকাশের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। ওই সময় আকাশের বাসায় মিতুর একটি ভিডিও ধারণ করা হয়।
যে ভিডিওতে মিতু তার একাধিক বন্ধুর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে। তবে ভিডিও ধারণের সময় মিতুকে আতঙ্কিত দেখা গেছে এবং তার ঠোঁটও রক্তাক্ত ছিল।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়াস্থ নগর পুলিশের সদরদপ্তরের কনফারেন্স হলে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান।
বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে থাকা আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক মিতুকে আটকের ঘটনায় আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশ আরো জানায়, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে এবং আকাশের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়ে মিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আকাশের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হলে সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আকাশের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি মামলা দায়ের করা না হয় তবে আকাশের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ‘ডায়িং ডিক্লারেশন’ হিসেবে নিয়ে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিতুকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে উল্লেখ করে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে মিতু বিবাহবহির্ভূত কিছু সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছে। আত্মহত্যার সাথে মিতুর বন্ধুদের কারো প্ররোচণা আছে কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।
যদি তাদের কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে পুলিশ আকাশ ও মিতুর দুইজনেরই মোবাইলফোন উদ্ধার ও জব্দ করেছে। আত্মহত্যার পূর্বে আকাশ মিতুর বিরুদ্ধে যে ছবি, স্ক্রিনশট দিয়ে আত্মহত্যার ঘোষণা দিয়েছিল সেই স্ট্যাটাসটি রিমুভ করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে আকাশ ও মিতুর মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ভোর ৪টার দিকে মিতুর বাবা প্রকৌশলী আনিসুল হক এসে মিতুকে আকাশের বাসা থেকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। এর পর আকাশ ভোর ৫টার দিকে নিজের শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেন।
এই আত্মহত্যার ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল নগরীর নন্দনকানন এলাকা থেকে মিতুকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে মিতু পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।