‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি জিরো টলারেন্স। দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। দুর্নীতি করলে কারো চাকরি থাকবে না। আমরা প্রতিটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতি করলে দোজখের আগুনে জ্বলতে হবে।’
রোববার (১২ জুন) বিকেলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) মিলনায়তনে আয়োজিত সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) আওতায় নিয়োজিত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণকে মোটরসাইকেল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘দুর্নীতি করলে দোজখে গিয়ে জ্বলে, পুড়ে মরতে হবে। ভালো কাজ করলে জান্নাতে গিয়ে আপেলও খেতে পারবেন। কিছু হলেই হাইকোর্টে দৌড়, হাইকোর্টেও নিয়ম তৈরি হচ্ছে। কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। আমি দুর্নীতি করলে আমাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক, সেসিপ প্রোগ্রামের পরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সভপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এএস মাহমুদ এবং অতিরিক্ত সচিব (অর্থ ও প্রশাসন) ড. অরুণা বিশ্বাস।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মোটরসাইকেল দেয়া হয়েছে। কাজের গতি বাড়াতে হবে। হাঁটার গতিতে রিপোর্ট আসলে হবে না, এখন থেকে বাইকের গতিতে রিপোর্ট করতে হবে। প্রত্যেকে যার যার কাজের এরিয়া যথাযথভাবে পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দিবেন। আপনাদের কাজের গতি বাড়ানোর জন্যই এতো আয়োজন।’
সেসিপ প্রোগ্রামের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ৫৫ শতাংশ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবির) ৪৫ শতাংশ অর্থ রয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে আমরা দান, দক্ষিণা, লিল্লাহ নিতাম। এখন আমরা লোন নিচ্ছি। যা আমরা পরিশোধ করতে পারছি। সে ক্ষমতা আমাদের হয়েছে। লোন পরিশোধ বা নিজেদের অর্থায়ন যাই বলি না কেন সবই জনগণের করের টাকায় করতে হয়। জনগণের টাকার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। আমাদের শিক্ষা পরিবার দেশের সবচেয়ে বড় পরিবার। প্রায় ৫ কোটি সদস্য আমাদের এ পরিবারে। প্রত্যকে যদি এক পয়সা করে বাচাতে পারি, ৫ কোটি পয়সা। এক মিনিট করে বেশি কাজ করলে ৫ কোটি মিনিট, এ ধরনের ধ্যান-ধারণা তৈরি করতে হবে।’
সারা দেশে সেসিপের প্রায় ৬০০ কার্যালয় আছে। এসব কার্যালয়ের অধীনে প্রায় ৩০ হাজার মাধ্যমিক স্কুল মাদরাসা পরিচালিত হয়। রোববার একই মডেলের ৩১৩টি মোটরবাইক বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত সেসিপের শিক্ষা কর্মকর্তাদের দেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সবাইকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
নায়েম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন থানার প্রায় ৩৩ জন শিক্ষা কর্মকর্তাদের হাতে বাইকের কাগজপত্র ও চাবি তুলে দেয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ জন, নারী ১৫ জন। পুরুষ এবং নারীদের জন্য একই মডেলের বাইক দেয়ায় আপত্তি তুলেছেন মোটরবাইক পাওয়া কয়েকজন নারী।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারীদের জন্য নারীদের উপযোগী বাইক প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। নিয়ম না থাকার কারণে নারীদের জন্য তাদের উপযোগী বাইক প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে পুরুষের উপযোগী করে বানানো বাইক নারীদের ব্যবহারে বেশ সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করেছেন তারা।
এ বিষয়ের প্রোগ্রাম পরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘নারী-পুরুষ সবার জন্য একইরকম মোটর সাইকেল দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কারণ তাদের যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো জায়গায় বদলি করা হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বদলি হওয়ার সময় যেখানের জিনিস সেখানে রেখে যেতে হয। আর সবাইকে সমান গুরুত্ব, সবার কাজ সমান সবকিছু মিলিয়ে একই রকম বাইক প্রদান করা হয়েছে।
তবে মোটর বাইকপ্রাপ্ত নারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনে করেন, তাদের জন্য স্কুটি আরামদায়ক হবে। এমন বাহন দিলে কাজের অগ্রগতি আরো ত্বরান্বিত হবে। কেউ কেউ বলেছেন, আমরা বলেছিলাম স্কুটি দিতে, এখন এটা দিছে কি করা যাবে। যা দিছে তাই।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সেসিপ প্রোগ্রামের যুগ্ম-পরিচালক রতন কুমার রায়, নায়েমের মহাপরিচালক প্রফেসর হামিদুল হক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কর্মকর্তারা।(বাংলামেইল)