ইস্তম্বুলের বিখ্যাত তাকসিম স্কয়ারের চিত্র এখন আর আগের মতো নয়। নবনির্মিত মসজিদ প্রাঙ্গণে জুমার নামাজে থাকে উপচে পরা ভিড়। গত ২৮ মে জুমার নামাজের মাধ্যমে মসজিদটি উদ্বোধন করেন তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান।
দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে এসে থাকেন। ব্যস্ততম নগরীর ক্লান্ত নাগরিকরা এখানে এসে খোলা আকাশের শ্বাস নেন। এখন মসজিদ চালুর পর তা দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় আরো বাড়তে থাকে।
গতকাল অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে অংশ নিতে মসজিদের বাইরে রাস্তায় দাঁড়ায় মুসল্লিরা। তাকসিম স্কয়ারের চারদিকে মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে পড়ে নামাজ আদায়ে। বিশাল সংখ্যক নারীও জুমার জামাতে অংশ নেন। ইস্তাম্বুলের নানা প্রান্তর থেকে তাঁরা এখানে আসেন।
জুমায় অংশ নেওয়া সিরিয়ান নারী ফাতেমা বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই চত্বর ও পর্যটন এলাকার নতুন ইতিহাসের সূচনা দেখতে আমরা এখানে এসেছি। আমি এলাকাটি পরিদর্শন করব বলে কল্পনাও করিনি। কারণ আমাদের ধারণা ছিল, এলাকাটি বিদেশি পর্যটক ও তরুণদের জন্য। তারা এখানে রাতেরবেলা গল্প করতে এখানে আসে। শপিং করে ঘোরাঘুরি করে।’
উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম জুমা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব নিশ্চিত করে মসজিদের ভেতর মুসল্লিরা অবস্থান করে। তাই মসজিদের ভেতর বেশি মুসল্লি সংকুলান হয়নি। মসজিদের বাইরের মুসল্লির সংখ্যা ছিল আরো বেশি।
শুধুমাত্র স্থানীয়রা তাকসিম স্কয়ারে আসেন এমনটি নয়। বরং বিশাল সংখ্যক ইউরোপীয় পর্যটকও জুমার নামাজের সময় মসজিদ পরিদর্শনে এসেছেন। স্পেন থেকে আসা ম্যারি ইস্তাম্বুলের নতুন এই মসজিদ সম্পর্কে মোটেও জানতেন না। তবে খবর পেয়ে চলে আসেন তা দেখতে।
ম্যারি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘খুবই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সবাই নীরব হয়ে কিছু যেন শুনতে থাকে। আমি বুঝতে পারিনি। তবে দৃশ্যটা খুবই সবাইকে আকৃষ্ট করে। আমি মসজিদের জমায়েত শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। এরপর ভেতরে ঢুকে স্মৃতিচারণমূলক কিছু ছবি তুলব। ইস্তাম্বুলের অন্যান্য মসজিদের মতোই এ মসজিদটি খুবই সুন্দর।’
ইস্তাম্বুলে তিন বছর ধরে বাস করেন মৌরতানিয়ান তরুণ উসমান। মসজিদটি তাকসিম চত্বরের নতুন প্রতীকে পরিণত হবে এমন নয়, বরং ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ নতুন এক পরিবেশ তৈরি করবে বলে জানান তিনি। জুমায় অংশ নিতে এসে উসমান বলেন, ‘আমি অনেক দূূর থেকে এসেছি। আজকের দিনে এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। মসজিদটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ইস্তাম্বুলের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী মসজিদের মতো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।’
অনেক আগে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান তাকসিম স্কয়ারে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। সর্বপ্রথম ১৯৫০ সালে এখানে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ধর্মনিরপেক্ষতা দোহাই দিয়ে বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা থেমে থাকে। অবশেষে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে চার বছরে তা শেষ হয়।
ইস্তাম্বুলের ব্যস্ততম নগরী তাকসিম স্কয়ারের ২৬ হাজার ৭১৬ স্কয়ার ফুট স্থানে মসজিদটি নির্মিত। এতে চার হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। দুই জন তুর্কি নকশাকার তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদের নকশা করেন।
মসজিদের ভেতর একটি সম্মেলন কক্ষ ও প্রদর্শনী হলও আছে। বিখ্যাত তুর্কি ক্যালিগ্রাফার দাভুত বেকতা ও অ্যাডেম তুরানের তৈরি কোরআনের প্ল্যাটও দিয়ে মসজিদের ভেতর সাজানো হয়েছে। দুই হাজার ৪৮২ স্কয়ার ফিটের মসজিদে প্রায় দুই হাজার ২৫০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। তাছাড়া ৬১ মিটার দীর্ঘ একটি মিনার আছে।
ঢাকা চীফ ব্যুরো, ০৫ জুন ,২০২১;