ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে ভারতের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার হীন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেছে। বর্তমান ডামি সরকার ও সরকারের সকল মন্ত্রী-এমপিরা দেশের জন্য ক্ষতিকারক। কাজেই এই অবৈধ সরকারকেই ক্ষমতাচ্যুত করে দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের স্বার্থে সব কিছু করছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতকে সবকিছু উজার করে দিতে পেরেই আত্মতৃপ্ত ও খুশি। কিন্তু দেশের জন্য কিছু নিয়ে আসতে না পারা যে তার জন্য ব্যর্থতা তা বুঝতে পারছেন না। এই অথর্ব প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য অভিশাপ। এদেরকে এখনই বিদায় করে দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের রেল করিডোরের স্বপ্ন পূরণ করতে দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে এই সিদ্ধান্ত রুখে দেয়া হবে। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগেই সরকারকে রেল করিডোরসহ ১০টি অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে। না হয় সারাদেশে দল-মত নির্বিশেষে এ ব্যাপারে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
জেলা নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চুক্তি করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রেল করিডোর। এটি দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দেশের জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে চুক্তি করা হয়েছে। তাই এসব চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
আজ শুক্রবার বিকাল ৪টায় চাঁদপুর বাইতুল আমিন শপথ চত্বরে কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ভারতের সাথে দেশবিরোধী সকল চুক্তি বাতিল এবং দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কথা বলেন।
জেলা সভাপতি শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবদিনের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, মাওলানা গাজী মুহাম্মদ হানিফ, সেক্রেটারি কে এম ইয়াসিন রাশেদসানী, হাফেজ মাওলানা বেলাল হোসাইন, শাহজামাল গাজী সোহাগ, মাওলানা হেলাল আহমাদ, আলহাজ মামুনুর রশিদ বেলাল, মাওলানা নুরুদ্দিন খান, ডা. বেলাল হোসাইন, মাওলানা আবু নাঈম তানভীর, মুহাম্মদ আবুল বাশার, মুহাম্মদ রাকিব প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবদিন বলেন, ভারতের রেল বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে চলতে দেয়া হবে না। একবার যদি পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের রেল চলতে দেয়া হয় তা’ হলে এ রেল আর বন্ধ হবে না। ফলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌত্ব থাকবে না। ভারতের সাথে আমরা সুসম্পর্ক চাই কিন্ত তা’হতে হবে মর্যাদাপূণ সম্পর্ক। ভারতের স্বার্থে দেশবিরোধী কোনো চুক্তি এদেশের মানুষ মেনে নিবে না। স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের ওপর দিয়ে ভারতের রেল চলার করিডোর দেয়া যায় না। ভারতকে সন্তুষ্ট রাখতে হলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। প্রধানমন্ত্রীকে এদেশের জনগণ ক্ষমতায় বসায়নি। ক্ষমতায় বসিয়েছে ভারত। যারা ভারতের সাথে বোঝাপড়া করে দেশ চালাতে পারবে না।ল তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
মাওলানা মাকসুদুর রহমান বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সাথে ১৩টি চুক্তি কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ বাহিনী ও সেনাবাহিনী। এজন্য এই দুই বাহিনীকে ভারত ট্রেনিং দিয়ে মগজ ধোলাই করার চুক্তি করা হয়েছে। ভারত আমাদেরকে কী ট্রেনিং দিবে? কোটা প্রসঙ্গে বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কোটাপ্রথা বাতিল করা হয়েছিলো ২০১৮ সালে। এখন বর্তমান আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়ে পুনরায় কোটাপ্রথা বহাল করে মেধাহীন প্রশাসন তৈরি করছে। আর এরাই দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই সম্মান করি। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, যে তাদের নাতি-পুতিরাও এর দোহাই দিয়ে ৫৬ ভাগ চাকুরি নিয়ে যাবে। আমরা কোটা চাই সর্বোচ্চ ১০ ভাগ। বর্তমান সরকার জনগণ বর্জিত সরকার। দেশের প্রতি তাদের ন্যুনতম দায়বদ্ধতা থাকলে ভারতের সাথে অসম চুক্তি করতে পারে না। তিনি বলেন, ১০টি দেশবিক্রির চুক্তি। প্রধানমন্ত্রী ইউরোপের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ইউরোপে বর্ডার নেই, কিন্তু ইউরোপে তো বিনা ভোটে সরকারও নির্বাচিত হয় না, দুর্নিতি হয় না, দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশে পাঠানো হয় না, দিনের ভোট রাতে হয় না। তাহলে আপনি এগলো করছেন কেন? ধান্দাবাজি ছেড়ে দিয়ে দেশ রক্ষায় কাজ করুন, না হলে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জনগণকে অভিশাপ থেকে বাচান। তিনি বলেন, সরকার শিক্ষাখাত, অর্থনৈতিক খাত, ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।সরকার ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিচ্ছে। গত মাসেও প্রধানমন্ত্রী ভারতে দুইবার সফর করেছেন। সেখানে তিনি ১০টি চুক্তি করেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের রেল যাবে। কিন্তু সেই রেলের ভেতর কী থাকবে তা বাংলাদেশ জানবে না। এতে অস্ত্র, মাদকদ্রব্য থাকতে পারে। সেজন্য দেশের উপর দিয়ে অবৈধ রেল করিডোর আমরা মানি না। এই সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার। এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে দেশের জনগণ আর এক মুহূর্ত ও ক্ষমতায় দেখতে চায় না
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল শহরের বাইতুল আমিন শপথ চত্বর থেকে শুরু হয়ে হকার্স মার্কেট মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, লেকের পাড় হয়ে মিশন রোড স্টেডিয়াম রোড হয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সাবেক জেলা সভাপতি মাওলানা নুরুল আমিন।
প্রতিবেদক: মুহাম্মদ বাদশা ভূঁইয়া