Home / বিশেষ সংবাদ / ভারতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল দিনাজপুরের রিকশা চালক নূর
ভারতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল দিনাজপুরের রিকশা চালক নূর

ভারতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল দিনাজপুরের রিকশা চালক নূর

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। পুজোর ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় কয়েক ঘণ্টা রিকশা চালানোর পরে তখন সবেমাত্র কাঁধে ফেলে রাখা গামছাটা দিয়ে মাথার ঘাম মুছছেন নুর। হঠাৎ সিটের দিকে নজর পড়তেই ফের কপালে জমল বিন্দু বিন্দু ঘাম!

নজরে এল, মেয়েদের একটি হাতব্যাগ পড়ে আছে। এতক্ষণে কম তো কাস্টমার চড়েনি রিকশায়। কার ব্যাগ, কোথা থেকে এল, এ বার কী করবনে তিনি, এ সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মোহাম্মদ নূরের তখন ত্রাহি ত্রাহি দশা। ভেবেছিলেন, যদি ঠিকানা পাওয়া যায় ব্যাগ থেকে, সে জন্য ব্যাগের চেন খোলার পরে নুরের তো চক্ষু চড়কগাছ। একগাদা সোনার গয়না ঠাসা ব্যাগটায়।

শেষমেশ অবশ্য ব্যাগের মালকিন ফিরে পেয়েছেন তার সম্পত্তি। এত সবের পরে অবশ্য উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের রিকশা চালক নুরের তেমন তাপ-উত্তাপ নেই। দার্শনিকের মতো নির্লিপ্তি নিয়ে বললেন, ‘‘অন্যের টাকা নিয়ে আমি কী করব! গতর খেটে যা রোজগার করব, তা দিয়েই সংসার চলে যাবে।’’

সংসার কেমন চলে নূরের?
শহর-লাগোয়া বিহারের মান্নাপাড়ায় থাকেন নুর। রিকশা চালান ইসলামপুর পুর এলাকায়। অভাবের সংসারে নিজের মোবাইল ফোন-টোনও নেই। কী ভাবে ফোন করতে হয় মোবাইল থেকে তা-ও জানেন না নুর।

তা হলে কী ভাবে ফেরাতে পারলেন গয়নাগাটি? বৃহস্পতিবার, নবমীর রাতে তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় ১২টা ছুঁয়েছে। অনেক ভেবেচিন্তে আর এক রিকশা চালককে ঘটনাটা জানান নুর। দুই মাথা এক হয়ে ঠিক হয়, থানায় গেলেই ভাল। কিন্তু থানার চৌকাঠ পেরোতে কার না বুক ঢিপঢিপ করে! নুররা তাই গোটা ঘটনাটা জানান স্থানীয় এক পুজো কমিটির সদস্যকে। তিনিই ব্যাগের মধ্যে থাকা ফোন ঘেঁটে রতন পালের শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রতনবাবু আর তাঁর স্ত্রী রুমকিই নবমীর রাতে উঠেছিলেন নুরের রিকশায়। রুমকিদেবীর হাত থেকেই খোওয়া গিয়েছিল গয়না-ভর্তি ব্যাগ।

কংগ্রেস রোডের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী রতন পালের পরিবার ততক্ষণে দিশাহারা। থানা-পুলিশও করেছেন। রিকশায় ব্যাগ ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছিল রুমকিদেবীর। চৌরঙ্গী মোড় থেকে রিকশা নিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে গিয়েও খোঁজ মেলেনি কিছুর। অবশেষে অচেনা নম্বর থেকে রতনবাবুর শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয়ের কাছে আসা একটা ফোনই বদলে দিল পরিবেশটা। জানা গেল, মোহাম্মদ নুর নামে এক রিকশাচালকের কাছে সযত্নে গচ্ছিত আছে রুমকিদেবীর গয়নার ব্যাগ।

রাত ২টো নাগাদ থানায় পৌঁছন নুর। ও পাশ থেকে ততক্ষণে থানায় এসেছেন রতনবাবু আর তাঁর পরিবারের লোকজনও। পুলিশের সামনেই ব্যাগ হস্তান্তর করেন নুর। পুলিশ কর্তারা রতনবাবুদের বলেন, ব্যাগ খুলে সব গুণে-গেঁথে নিতে। দেশা যায়, প্রায় ৬ ভরির সোনার গয়না (বাজার দর নয় নয় করে লাখ দু’য়েক তো বটেই), মোবাইল ফোন, সব একদম ঠিকঠাক। পুলিশ জানিয়েছে, নুরের হাতে আড়াই হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন রতনবাবু।

নবমীর রাতের ওই ঘটনার পরে এলাকায় কার্যত ‘হিরো’ বনে গিয়েছেন নুর। ইসলামপুর থানার আইসি মুকসেদুর রহমান বলেন, ‘‘এখনকার দিনে এমন সৎ মানুষের খোঁজ মেলা ভার। ওঁকে কুর্নিশ জানাই।’’ আর রতনবাবুর কথায়, ‘‘ওঁর সততার তুলনা হয় না।’’

আর এত সবের পরে এক রকম ধড়ে প্রাণফিরে পেয়ে কী বলছেন রুমকি? যাঁকে সামনে পাচ্ছেন, নুরের তারিফ করছেন তাঁর কাছেই। বললেন, ‘‘সংসারে যাঁর এত অভাব, তিনি এত সৎ হতে পারেন, ভাবতেই পারছি না। কত বড় মাপের মানুষ উনি!

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক: ।। আপডেট ১১:৫৮ পিএম ২৪ অক্টোবর, ২০১৫ শনিবার
প্রতিনিধি/ডিএইচ