আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারত। ১৬ জানুয়ারি শনিবার সকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলায় অবশ্য সকাল ৯টা থেকেই ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে,টিকাদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশজুড়ে দু’টি কোম্পানির টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন টিকা।
শনিবার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করে ভিডিও বার্তায় দেয়া বক্তব্যে কম সময়ের মধ্যে টিকা আবিষ্কার করায় গবেষক এবং বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনেশন শুরু হলেও, সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আগের মতোই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলায় কোনও ঢিলেমি চলবে না।
ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে তিন হাজার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। প্রথম দফায় সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। প্রথম দিনেই ওই প্রতিটি কেন্দ্রে ১ শ জনের শরীরে প্রতিষেধক প্রয়োগের লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এদিন প্রায় তিন লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
কেন্দ্রিয় সরকারের নির্দেশাবলী অনুযায়ী, টিকাদানের ক্ষেত্রে ‘কোউইন’ নামের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। প্রতিষেধক নেওয়ার আগে তাতে নাম ও পরিচয় নথিভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়াও কত প্রতিষেধক মজুত রয়েছে, প্রতিষেধকের জন্য কত ডিগ্রি তাপমাত্রা আদর্শ, কত জন এটি নিয়েছেন এবং টিকা নেওয়ার পর তাদের শরীরে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে, ওই অ্যাপের মাধ্যমেই সব কিছুতে নজর রাখা হবে।
এছাড়া কেন্দ্রিয় সরকারের তরফে ২৪ ঘণ্টাব্যাপি একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রতিষেধক সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। তবে টিকাকরণ শুরু হলেও সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আগের মতোই সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন,‘আমার অনুরোধ, টিকাদান শুরু হয়েছে বলেই মাস্ক খুলে ফেলা বা সামাজিক দূরত্ব বিধি লঙ্ঘনের ভুল করবেন না আপনারা। প্রথম ডোজ নেওয়ার পরেও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ দ্বিতীয় ডোজ না নেওয়া পর্যন্ত শরীরে পুরোপুরি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে না। তাই দাওয়াই এবং কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, দুই নীতি মেনেই চলতে হবে আমাদের।’
ভারতে এতো বিশাল আকারের টিকাদান কর্মসূচি আগে কখনও দেখা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন মোদি। তবে রেকর্ড সময়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
মোদি বলেন, ‘প্রতিষেধক কবে আসবে, সে দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সমস্ত দেশবাসী। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকাকরণ কর্মসূচির শুরু হতে চলেছে। এর জন্য বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের প্রশংসা প্রাপ্য। দিন রাত এক করে পরিশ্রম করেছেন তারা। প্রতিষেধক তৈরি সাধারণত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু এক্ষেত্রে রেকর্ড সময়ে আমাদের হাতে জোড়া প্রতিষেধক এসে পৌঁছেছে।’
প্রথম দফায় স্বাস্থ্যকর্মীসহ সামনের সারির তিন কোটি মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। এ পর্ব শেষ করতে কয়েক মাস লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর কয়েক ভাগে বাকি নাগরিকদের টিকার আওতায় আনা হবে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় টিকা কেন্দ্রগুলোকে নবান্ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিষেধক প্রয়োগের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তদের এবং টিকা গ্রহণকারীদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন তিনি। কলকাতার সাত জন বিশিষ্ট চিকিৎসককেও প্রথম দিনের প্রতিষেধক নেওয়ার তালিকায় যুক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রাজ্যের প্রতিটি কেন্দ্রে থাকছে ‘ওয়েব কাস্টিং’ এর ব্যবস্থা।
এরইমধ্যে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ভ্যাকসিন পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রতিটি কেন্দ্রেই প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা থাকছে। প্রতিটি কেন্দ্রে রিউমার রেজিস্টার রাখা হচ্ছে। প্রতিষেধকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসহ কোনও বিষয়ে গুজব ছড়ালে কারা, কোন মাধ্যমে ছড়াচ্ছে তা ওই রেজিস্টারে লিখে রাখা হবে।
প্রতিষেধক গ্রহীতাদের কোনও মতামত থাকলে তা-ও লিখে রাখা হবে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা এইএফআই (অ্যাডভার্স ইভেন্টস ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন) সংক্রান্ত বিষয়টি দেখভালের জন্য থাকবেন একজন চিকিৎসক। তিনি ছাড়া প্রতিষেধক নিয়ে অন্য কেউ প্রতিক্রিয়া দেবেন না।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক , ১৬ জানুয়ারি ২০২১
এজি