আন্তর্জাতিক

ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক ।  আপডেট: ০১:৫৩ অপরাহ্ণ, ২৮ জুলাই ২০১৫, মঙ্গলবার

দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে আসামের গুয়াহাটি থেকে বিশেষ বিমানে করে নিয়ে আসা ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের মরদেহ গ্রহণ করলেন ভারতের বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে মঙ্গলবার সকালে এপিজে কালামের মরদেহ শিলং থেকে আসামের গুয়াহাটিতে নেয়া হয়।

দুপুরে পালাম বিমানবন্দরে কালামের মরদেহ পৌঁছানোর পর তাঁকে গার্ড অব অনার দেন তিন বাহিনী প্রধান। সেসময় ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল উপস্থিত ছিলেন। বিকেল পর্যন্ত কালামের মরদেহ রাখা হবে ১০ রাজাজি মর্গে নিজস্ব বাসভবনে। সেখানে দুই ঘন্টা ধরে তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। এরপর বিকেল চারটার দিকে জানাজার জন্য কালামের মরদেহ নেয়া হবে জন্মস্থান তামিল নাড়ুর রামেশ্বরামে।

এদিতে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে ভারতে চলছে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। শোক জানিয়ে মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে পার্লামেন্টের দু কক্ষও।

মুম্বাই থেকে গুয়াহাটি হয়ে সোমবার সকালেই শিলংয়ে পৌঁছেছিলেন এপিজে আব্দুল কালাম। সন্ধ্যায় আইআইএম-শিলংয়ে ভাষণ দিচ্ছেন তখন। আচমকাই তিনি অসুস্থতা বোধ করেন। মঞ্চে পড়েও যান। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বেথেনি হাসপাতালে। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কালাম।

হাসপাতালের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আইসিইউতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে রেখে চেষ্টার কোনও ত্রুটি করেননি চিকিৎসকেরা। ছুটে আসেন সেনা হাসপাতাল এবং ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্সেসের চিকিৎকেরাও। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। সন্ধ্যা সাতটা পঁয়তাল্লিস মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎত্সকেরা জানিয়েছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির।

তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে এপিজে আব্দুল কালামের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৫ই অক্টোবর।বাবা জৈনুলাবেদিন, মা আসিয়াম্মা। নেহাতই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন এপিজে কালাম। অভাবের সংসারে ছোটবেলা আদৌ স্বাচ্ছন্দ্যে কাটেনি কালামের। অল্প বয়সেই সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরও পড়াশোনা ছাড়েননি। পরম নিষ্ঠায় নিজেকে একটু একটু করে গড়ে তোলা সেই মানুষটিই পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন গোটা দেশের পথ প্রদর্শক। তিরুচিরাপল্লীর সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরও তৃপ্তি পাননি। পরের বছরই মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন কালাম।

এমআইটির স্নাতক কালাম ছিলেন ভারতের অন্যতম প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র মুখ্য বিজ্ঞানী। পরে যোগ দেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোয় । তিনিই ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল প্রজেক্টের অধিকর্তা। তাঁরই ত্ৎপরতায় কেন্দ্রীয় সরকার আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে সায় দেয়। অগ্নি ও পৃথ্বীর মতো মিসাইল কর্মসূচি রূপায়ণে কালামই ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। প্রযুক্তিগত দক্ষতায় তাঁর উদ্ভাবনীর জেরে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়ে ওঠে আরও নিশ্ছিদ্র। পোখরানে পারমাণবিক বিস্ফোরণের নেপথ্যে মূল চালিকাশক্তিও ছিলেন তিনি। এর সুবাদেই দেশজুড়ে মিসাইল ম্যান নামে পরিচিত হন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান উপদেষ্টা ছিলেন এপিজে কালাম। থেকেছেন আরও নানা সরকারি পদে। ২০০২ সালে সেই মানুষটিই সরকার ও বিরোধী দলের সমর্থন আদায় করে নিয়ে দেশের একাদশ রাষ্ট্রপতি হন । ভাবনা, মনন ও আচরণে তিনি ষোলো আনা জনগণের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বলেই মনে করে বিদগ্ধ মহল। ব্যস্ততার মাঝেই চলেছে তাঁর নিরন্তর পড়াশোনা এবং গবেষণা। ইন্ডিয়া টোয়েন্টি টোয়েন্টি, ইনস্পায়ারিং থটস, ইগনাইটেড মাইন্ডসের মতো একের পর এক অমূল্য গ্রন্থের লেখক তিনি।

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি

Share