ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী সালাউদ্দিন

এখনো রহস্যময়ই রয়ে গেছে মেঘালয়ে সালাহউদ্দিনের নাটকীয় উপস্থিতি। আটকের চার দিন পরও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি রাজ্য পুলিশ। গত সোমবার সকালে পুলিশ রাজধানী শিলংয়ের রাস্তা থেকে আটক করে বিএনপির নিখোঁজ এই নেতাকে।

তবে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো প্রায় দু`ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মেঘালয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। খবর দ্য শিলং টাইমস।

পুলিশেরই কয়েকটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দাদের সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, কোনো একটি জায়গায় ঘুপচি ঘরে প্রায় দু`মাস রাখা হয়েছিল তাকে। তারপর বেশ কয়েকবার গাড়ি বদল করে শিলংয়ে নিয়ে আসা হয়। পূর্ব খাসি পার্বত্য অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) এম খর্গরং জানান, সালাহউদ্দিনকে অপহরণের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। যেহেতু তার (সালাহউদ্দিন) হার্টের একটু সমস্যা রয়েছে তাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

এর আগে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুতই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে এনে তদন্ত করা হবে বলে বুধবার জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সালাহউদ্দিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করছেন এটা এখন প্রমাণিত। তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা আছে, তাই দেশে যখন আসবেন তখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। উনি (সালাহউদ্দিন) এখন ভারতে আছেন এবং সেখানেও তার একটি মামলা আছে। তাই ভারত সরকারের আইনি প্রক্রিয়া শেষে এখানে তিনি আসবেন। তখন আমরা আমাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করবো।

এরই মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্র বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিজ দেশের সরকার দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছেন বিধায় সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতেন পারেন। তবে ওই কর্মকর্তা জানান, কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মেঘালয়ে সালাহউদ্দিনের অনুপ্রবেশ এটা বিবেচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

এদিকে, নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মেঘালয়ের সিভিল হাসপাতালে দেখা করেছেন দলের অফিস সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি এবং আরো দুই আত্মীয়। বৃহস্পতিবার রাতে তারা সাক্ষাৎ করেছেন বলে বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে আইয়ুব আলী নামের একজন জানান, তিনি কলকাতায় থাকেন এবং সালাহউদ্দিন আহমেদের দূর সম্পর্কের ভাই। অপরজন হুমায়ুন রশিদ জানান, তিনি সালাহউদ্দিন আহমেদের কাজিন।

মেঘালয় হাসপাতালে আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য মঙ্গলবার ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। হাসপাতালে দেখা করার জন্য বিএনপির অফিস সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি এবং দুই আত্মীয়কে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।

আব্দুল লতিফ জনি জানান, কোনো রাজনৈতিক দলের হয় নয়, একজন পারিবারিক বন্ধু হিসেবে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তিনি। দেখার করার আরেকটি উদ্দেশ্য তার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেয়া। তিনি আরো জানান, সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ মেঘালয়ে আসলে কেবল তখনই রাজনৈতি আশ্রয় ও অন্যান্য আইনি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

তবে, দীর্ঘ ৬২ দিন পর `নিখোঁজ` স্বামীর খোঁজ পাওয়ার পর থেকে ভিসার পেছনে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন হাসিনা অাহমেদ। টানা তিন দিন ঘুরেও ভারতে যাওয়ার ভিসা পাননি তিনি। গত সোমবার সালাহউদ্দিনের খোঁজ পাওয়ার পর থেকে ভিসার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন হাসিনা। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভিসা পাননি বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ রাতে ‘নিখোঁজ’ হন সালাউদ্দিন আহমেদ। বিএনপি চেয়ারপাসরন খালেদা জিয়া কয়েকদিন আগেও অভিযোগ করেছিলেন যে সালাউদ্দিন র‌্যাবের কাছে আছেন। তবে র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময়ই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন।

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/‍এএস/ডিএইচ/২০১৫

 

 

Share