জাতীয়

ভারতের যে গ্রামের স্মৃতি আজও আবেগ আক্রান্ত করে রাষ্ট্রপতি হামিদের

সোলার সামিটে যোগ দিতে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শুক্রবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কাছাকাছি মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলার ছোট্ট গ্রাম বালাত সফরকালে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই গ্রামে তার অবস্থানের স্মৃতিচারণ করেন।

দীর্ঘ ৪৭ বছর পরে রাষ্ট্রপতি আজ বালাত সফর করেন। এ সময়ে তিনি স্থানীয় লোকজনের সাথে মতবিনিময় করেন এবং ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের সাথে জড়িত স্মৃতিচারণ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (মুজিব বাহিনী)’র একজন সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়াও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গুঘাট, মৈলাম ও বালাতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি যুবকদের তৎকালীন পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামের চেতনায় সংগঠিত করেছিলেন তিনি। শুক্রবার বিকালে বালাত গ্রামে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা লোকদের আবদুল হামিদ বলেন, ‘আজ আমার এখানে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। এখানে আসতে আমার অনেক দেরি হয়ে গেল… কিন্তু স্মৃতি আজও আমাকে আবেগ আক্রান্ত করে তুলে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মেঘালয়ের টেকেরহাট, গুমাঘাট, পানছড়া ও মৈলাম হয়ে বালাত পৌঁছেছিলাম। এখানে আমি ইয়ুথ রিসেপশন ক্যাম্প স্থাপন করি, যার সদস্যরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে আমি দায়িত্ব পালন করি।’

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘আর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আমি বাঙালি শরণার্থীদের দেশে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করি। বেশ কয়েক ব্যাচ শরণার্থী দেশে ফেরার পর অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি আমি নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে যাই। সেদিন ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। আমি আজও সেই গৌরবময় দিনগুলোর কথা সানন্দে স্মরণ করি।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ঠিক এই জায়গাতেই তারা যুব মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছিলেন এবং সিনিয়র রাজনীতিবিদ ও সংগঠকদের সঙ্গে যুদ্ধ কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। পরে ১৯৭১ সালের এপ্রিল নাগাদ আরো জনগণকে সংগঠিত করতে বাংলাদেশে ফিরে যাই এবং আবার ভারতে প্রবেশ করি।

এ সফর নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, সুদীর্ঘদিন পরে হলেও আমি যথাযথভাবে আমার দায়িত্ব পালন করলাম।’ এ দিনটি তার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের অনেকেই ইহকাল ছেড়ে গেছেন কিন্তু আমি যথাযথ শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের ত্যাগ-তীতিক্ষার কথা স্মরণ করছি।

তিনি বলেন, ‘সেই দুর্দিনে যারা আমার পাশে ছিলেন, আমি তাদের কখনোই ভুলবো না।’ যুদ্ধের সময় তিনি যে ঘরটিতে থাকতেন রাষ্ট্রপতি সেই ঘরটিও পরিদর্শন করেন। তার পত্নী রাশিদা খানমও ওই ঘরে দেড় মাস তাঁর সঙ্গে ছিলেন। রাষ্ট্রপতি সেইসব চা দোকান ও স্থানীয় বাজারও পরিদর্শন করেন যেখানে তারা সেইসময় স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন লাখ লাখ বাংলাদেশি দু’দেশের সীমান্ত দিয়ে এই ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছিল তখন ভারত সরকার ও এর জনগণের আন্তরিক অবদান ও সমর্থনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা দুঃসময়ে সর্বোচ্চ আতিথেয়তার জন্য ভারতের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ।’

আগামী ১১ মার্চ নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠেয় ‘ফাউন্ডিং কনফারেন্স অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স (আইএসএ) ও সোলার সামিট-২০১৮-তে যোগ দিতে চার দিনব্যাপী ভারত সফরে যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আগামী ১২ মার্চ তার দেশের ফেরার কথা রয়েছে।

এমটিনিউজ

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১: ০০ পি.এম ৯মার্চ,২০১৮ শনিবার
এএস.

Share