চাঁদপুরে ডাকাতিয়ার ভাঙন আতঙ্কে ২৫০ পরিবার

চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে প্রায় আড়াইশো পরিবার। যার মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি পরিবারের বসতঘরসহ ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি দীর্ঘদিন অল্প অল্প করে ভাঙার কারণে বিষয়টি নজরে পড়েনি কর্তৃপক্ষের। অসহায় এসব পরিবারের ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীর ইসলামপুর গাচতলা এলাকার ৪নং ওয়ার্ড জমাদারবাড়ি সংলগ্ন নদী তীরবর্তী এলাকায় গত তিনদিন আগেও ভাঙনের শিকার হয়েছে এলাকাবাসী। ৮০০ মিটার জায়গাজুড়ে চলছে এই ভাঙন তাণ্ডব। এতে এলাকার ২০০’র অধিক পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদী তীরবর্তী কয়েকটি ঘর যেকোনো মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে নদী গর্ভে।

স্থানীয় সাজু জমাদার, আবু তাহের জমাদার, করিম মুন্সীসহ অনেকেই জানান, গত ১০ বছরে নদীগর্ভে চলে গেছে অনেক পরিবার, কবরস্থানসহ ফসলি জমি। এছাড়া স্থানীয় আবু তাহের জমাদার এর বসার ঘরটি নদী থেকে মাত্র ৩, ৪ হাত দূরে হওয়ায় তিনি আছেন চরম আতঙ্কে। যেকোনো মুহূর্তে চলে যাবে ঘরটি। নিজের কোনো জায়গা জমি না থাকায় অন্য কোথাও আশ্রয় নিতে পারছেন না তিনি।

এছাড়াও যারা অতীতে এমন ভাঙনের কবলে পড়েছেন তারা দূরবর্তী কোথাও গিয়ে নিজের কোনো আত্মীয়ের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।

মানিক জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বেশ কয়েকবার সরেজমিনে স্থানটি প্রদর্শন করে গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি।

তারা জানান, বর্ষায় নদীতে পানি বৃদ্ধি ও স্রোত বৃদ্ধির কারণে প্রতি বছরই এ ভাঙন দেখা যায় তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশি ভেঙেছে। অসহায় তীরবর্তী পরিবারগুলো খুবই আতঙ্কে রাত কাটান। তাই তাদের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে উপকৃত হবে স্থানীয় মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল জানান, বিষয়টি জানতে পেরে এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি সরেজমিনে এসে দেখে গেছেন। পরে আবার গত নির্বাচনের আগেও তিনি এসেছিলেন। তখন তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। এবছর আবার কতগুলো পরিবার ভিটেমাটি হারায় সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) জাকির খান জানান, ভাঙন প্রবণ এলাকাটি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অনেকেই সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। গত দুদিন আগেও ভিক্ষাবৃত্তি করে চলা একটি পরিবারের ঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। এই জায়গাটুকু ছাড়া তাদের আর কোনো সম্পদ ছিল না। এরকম গত কয়েক বছরে আরো অনেকগুলো পরিবার এমন ভাঙনের শিকার হয়েছে। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া না হলে অবশিষ্ট পরিবারগুলোর এই ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেন, ভাঙনের বিষয়টি আমরা আগে থেকেই অবগত আছি। ডাকাতিয়া ছাড়া আরও ১৪ টি স্থান নির্ধারিত আছে। যেগুলো ভাঙনপ্রবণ এলাকা। আমরা এর তালিকা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আপাতত ভাঙনরোধে অস্থায়ী কাজ করার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করব। অনুমতি পেলে সাথে সাথেই আমরা অস্থায়ী কাজ শুরু করবো।

চাঁদপুর করেসপন্ডেট,২ জুলাই ২০২১

Share