সেদিন ফেসবুকে দেখি ‘হেনরী’ নামে এক মহাশয় আমাকে মাধ্যমে ইংলিশে বলছে, আমি আনফ্রেন্ড কেন? আমি অতটুকু দেখে সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় রিপল্যাই দিই, কই, আমি ত আপনাকে আনফ্রেন্ড করিনি।
ও সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, আমি করছি। ওমা! অবাক হয়ে দেখি আনফ্রেন্ডের পাশে লিখেছে, আমার স্ট্যাটাস দেখুন। মানে, আমি আনফ্রেন্ড কেন? ওঁর স্ট্যাটাস দেখতে। আমি বললাম, কেন? ও বলল, আজ রাতে সাড়ে চার হাজার জনকে আনফ্রেন্ড করব। সে ভাগ্যবানদের মধ্যে আপনিও একজন। আজররে এত বন্ধু দিয়ে কী করব।
আমি আরও অবাক হলাম–বললাম, আমার দোষ? আমি ত ভাই, ভাগ্যবান হতে কোন সময় পারিনি, সব সময় দুর্ভাগ্যকে বুকে নিয়ে আছি। এখন এত বড় ভাগ্যবান হতে দেখে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। আর কোন জবাব আসে না দেখে বললাম, আপনার বন্ধু হওয়ার জন্যে কাঁদে কে? একটুপর দেখি আমি ব্লক।
যাই হোক, ঘটনা কী সেটা জানার আমার দরকার নেই। দরকার হচ্ছে, আপনি পৃথিবীর সুখী মানুষ, বিরাট ধনী, সুশিক্ষিত, পরিচিতমুখ, বিখ্যাত বা প্রখ্যাত একজন হতেই পারেন; তাতে কারও কিছু যায়-আসে না। আর আপনি বড় বলে অন্যরা যে ছোট হবে এমন কথাও নয়। ধনী হওয়া সহজ কিন্তু মনের ধনী হওয়া কঠিন। আর এখানে কেউ আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেও আজররে বসে নেই। তা হলে? এখানে আপনার বন্ধুত্বের কাঙাল কে? আপনি যত বড় পাবলিক ফিগারই হোননা কেন, আপনার বন্ধুত্বের ভিখারি চার হাজার চার শ নিরানব্বই জন হতে পারে একজন নয়। আপনি কি মনে করেন, আপনার বন্ধুত্বের উপর ভর দিয়ে জগৎ চলে? আপনিই পৃথিবীর একটা কিছু? আপনি এটাও কি মনে করেন, ফেসবুকের সকল আইডি ভুয়া? সব গরুছাগলেরাই ব্যবহার করে? অথবা সবাই ফুটপাতের লোক? এর অন্তরালে দুয়েকটি আইডিও কি মানুষের নেই? তা হলে? যে নিজের বিবেকের কাছে বড় হতে পারল না সে কোন শিক্ষিতই হতে পারল না।
নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। কারণ আপনার মতো বড় মাপের মানুষের বন্ধুতালিকায় এ অধমের নাম কেন যুক্ত হল। আমি ভাই খুব ক্ষুদ্র মানুষ, তাই আমার ফ্রেন্ডলিস্টে জানা-অজানা যত বন্ধুই আছে সকলকে আমার চেয়ে অনেক উত্তম ভাবি। তবে আমি আবার ছোট হলেও অজানা-অচেনা-অপরিচিত কাউকে তেমন একটা বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাই না। যদিওবা কারও মান দেখে ভাল মনে হলে তবে হাতেগনা দু-চার জন। তন্মধ্যে আপনার কাছ থেকে যে শিক্ষা হাসিল হয়েছে তাতে চিরজীবনের শিক্ষায় শিক্ষিত হলাম। আজ থেকে সেটাও বন্ধ করলাম। হোননা আপনি একজন সেলিব্রেটি। তাই বলে আপনার পিছে ঘুরঘুর করবে এমন আত্মার অধিকারী অনেকে নয়। স্রষ্টা যেই উপাদান দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করছেন, সেই উপাদান দিয়ে আমাকেও সৃষ্টি করেছেন। আপনি আপনার প্রতিভাবলে হয়তো আকাশে উড়তে সক্ষম হয়েছেন, আমি আমার ভাগ্যগুণে কিবা মাটিতেই রইলাম–তাতে কী? এ বনবাসশেষে এক কক্ষেই ত বাস।
আপনি যত খুশি বন্ধুত্ব বাদ দিন, তাতে দুঃখ কার? আর আপনার মতো অহঙ্কারী লোকের বন্ধুত্ব দিয়ে অন্তত আমার মতো লোকের দুপয়সার উপকার ত হবার নয়। তা হলে? গলা হাঁকিয়ে ভাগ্যবান বলে খোঁচা দেওয়ার যুক্তিটা কী? পৃথিবীতে কি আপনিই একজন মহারথী যার বন্ধুত্ব না হলে পৃথিবী অচল? জনাব, শুধু ডিগ্রি নিলেই যে শিক্ষিত হওয়া যায় কে বলে? শিক্ষার্জন ও আখলাকেরও বিশেষ জরুরি। হাসতে ইচ্ছে করে ভাই, আপনি যেভাবে বলছেন, যেন দুনিয়ার মানুষসব আপনার বন্ধুত্বের পাগল!
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আত্মাহঙ্কারী হওয়া গৌরবের। তবে এমন আত্মাহঙ্কারী হওয়া মোটেও কল্যাণের নয়। নূহ্ আদ লূত ছমুদ পূর্বে এমন বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে এরকম আত্মাহঙ্কারের কারণে। সুতরাং আপনি ধনীর দুলাল ননির পুতুল যা-ই হোননা কেন, আপনার জন্যেই আপনি সব। মনে করেন না, অন্যদের কাছে আপনি কোন বিস্ময়। নমরুদ ফেরাউন হামান ও কারুন এমন বহু জনকে আল্লাহতাআলা সম্পদশালীর সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষমতাবানও করেছিলেন কিন্তু ভাগ্যবান কোনদিন করেননি। আপনি আমাকে যে ভাগ্যবান করছেন, চিন্তা করতে হয় তবে পরিণতির কথা। আপনি যদি আবার ওদেরকেও ছাড়িয়ে যান। আরে ভাই, এখানে কে আপনার বন্ধু হল-না-হল সেটা নিয়ে অনর্থক মাথাব্যথা না করে মেধা আর সামর্থ্য থাকলে দেশের জন্যে ও দশের জন্যে কিছু করে যেতে পারেন কিনা চেষ্টা করেন। তা হলে শুধু এখানে নয় ওখানেও মঙ্গল। প্রার্থনা করি, জয় হোক আপনার–জয় হোক আপনার অহঙ্কারের।
আযহা সুলতান, চট্টগ্রাম থেকে
|| আপডেট: ০৬:০৬ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৬, বুধবার
এমআরআর