ভাইবা পরীক্ষায় এক মেয়েকে প্রশ্ন করা হলো– আপনে লাইফে কয়টা রিলেশন করেছেন? প্রশ্নটির জবাবে মেয়েটি মুচকি হেসে বললো– এ প্রশ্নটির জবাব একমাত্র আমার বাবা দিতে পারবে? আর তাই আমি আমার বাবাকে ফোন দিতে চাই।
সবাই মেয়েটির এমন উওর শুনে খুব বেশি অবাক হয়ে গেলো, সবার মধ্যে থেকে একজন লোক হঠ্যাৎ বলে উঠলো– জ্বি সমস্যা নেই আপনে আপনার বাবাকে ফোন দিতে পারেন।
মেয়েটি অতঃপর তার বাবাকে ফোন দিলো — এবং জিজ্ঞাসা করলো বাবা আমি লাইফে কয়টা রিলেশন করেছি।
ফোনের ওপাশ থেকে বাবা বলে উঠলো– মা একটা ও না। মেয়েটির বাবার কথাশুনে সবাই একজন আরেক জনের পানে চেয়ে রইলো, ঠিক তখনি বড় স্যার মেয়েটির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মেয়েটির বাবাকে বলে উঠলো– আপনে কীভাবে শিউর যে আপনার মেয়ে লাইফে কোনো রিলেশন করেনি?
— মেয়েটির বাবা তখন বললো — স্যার আমার মেয়েটির বয়স যখন সবে মাত্র সাত বছর সেই বয়স থেকে আজ ওর ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমিই হচ্ছি ওর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি কখনো আমার মেয়েকে বলিনি যে– মা আমার এ কাজটি পছন্দ নয়, বা এ কাজটি যদি তুমি ভুল করে ও কর, তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা, বা কখনোই আমি এরূপ আচরণ করিনি বিধেয় আমার মেয়ে কোনো সংকোচ ছাড়াই সবকিছু আমাকে বলতো ।
আমি রাস্তায় যদি কখনো কোনো মেয়েকে অসভ্যতার মতো চলতে দেখতাম বা কোনো অল্পবয়সী ছেলে- মেয়েকে প্রেম করতে দেখতাম, আমি বেষ্ট ফ্রেন্ডের মতো আমার মেয়েকে সেগুলো লক্ষ্য করে বলতাম — মা এগুলো ভালো নয়, কখনো এই পথে যেওনা, না হলে তোমার সুন্দর ফিউচার নষ্ট হয়ে যাবে।
আমার এখনও মনে আছে আমার মেয়ে প্রথম যখন প্রেমের পস্তাব পায় তখন আমার মেয়ে সবে মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে, আমাকে এসে ঝাপটে ধরে বলে বাবা আজকে না পাড়ার রবিন নামের ছেলেটা আমায় ফুলের তোড়া আর চকলেট দিয়েছে এবং বলেছে ও আমাকে ভালোবাসে, আর তাই আজকে স্কুল থেকে আমি ওর সাথে ঘুরতে গিয়েছি।
আমি তখন হাসি মুখে বললাম — তাই মা, ভালো । আমার এ উওরটি শুনে আমার মেয়েটি হাসি মুখে বললো– আমি জানতাম বাবা তুমি আমায় কিছু বলবে না, অথচ ফ্রেন্ডরা আমায় বারবার বললো তোমাকে এ কথা বলতে না, তুৃমি শুনলে নাকি আমায় অনেক মারবে, কিন্তু আমি বলেছি না আমার বাবা এমন নয় আর ওনি শুধু আমার বাবা নয় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, বাবা আমি ঠিক বলেনি?
— হুম ঠিক বলেছিস মা। এই বলে আমি আমার মেয়েটির হাত ধরে ওকে একটা আমগাছের সামনে নিয়ে যাই । অতঃপর একটা বড় লাঠি দিয়ে আমগাছ থেকে আম পাড়তে চাইলে আমার মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বলে উঠে– বাবা তুমি এটা কী করছো?
— কেন মা আম পাড়ছি।
— বাবা তুমি দেখছোনা আমগুলো এখনো ছোট সবেমাত্র মকুল থেকে আম হয়েছে, এগুলো এখন পাড়া বা খাওয়া কোনোটাই উচিত নয় ।
আমার মেয়ের এ কথা শুনে আমি আমার মেয়েটির হাতটা ধরে বললাম — মা, এমন কথা যদি আমি তোকে বলি? আমি যদি বলি এখন এসব প্রেম,ভালোবাসা করা উচিত নয়, কারন তুই এখন ও ছোট, তুই কী মানবি? এই আমগুলো এখন যেমন খাওয়া যাবেনা, আর কেউ খেলে ও তা সাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর ঠিক তেমনি মা এই এই বয়সে প্রেম- ভালোবাসা ও তোর ভবিষ্যৎতের জন্য অমঙ্গলকর, এই বলে আমি চলে আসলাম।
সেদিন থেকে ক্লাস টেন অবদি আমার মেয়ে সবসময় আমার এ কথাটিকে মনে রেখে জীবন পথে চলেছে। আমার এখন ও মনে আছে ক্লাস এইটে থাকতে — একদিন মেয়ে খুব বায়না করেছিলো জিন্স পড়ার জন্য, আমি তখন মেয়েকে বলেছিলাম ঠিক আছে কিনে দিবে, পরেরদিন একটা জিন্স এনে দিয়েছিলাম, মেয়ে সেটা পড়ে দিব্যি খুশীতে আমার সামনে হাঁটতে থাকে, আমি তখন মেয়েকে দেখিয়ে টিভির উপরে দেওয়া পর্দাটাকে সরিয়ে ফেললাম এবং বাইরে ফেলে দিলাম,আমার মেয়ে তখন রেগে বললো– বাবা তুমি এটা কী করলে?
আমি তখন বললাম– টিভির উপরে আবার পর্দা দেওয়ার কী দরকার, এমনেই তো ভালো লাগে তাই ফেলে দিলাম।
আমার মেয়ে তখন বললো — উফ বাবা! তুমি জাননা টিভির উপর পর্দা না দিলে ময়লা বা ধূলাবালি পড়ে।
আমি তখন মেয়েকে হেসে বললাম– ঠিক তেমনি মা অশালীনতা পোশাকে নারীর শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়, ধূলাবালি পড়ে আর সেই ধূলাবালি কী জানিস মা? পাড়ার বখাটে ছেলেদের খারাপ দৃষ্টি আর বাঝে মন্তব্য, আর রবিন নামের হাজারো ছেলের আবেগকে প্রেমনামে প্রকাশ করে হাজারো মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করা।
সেদিন থেকে আমার মেয়ে আজ পর্যন্ত কখনোই অশালীনতা পোশাক পরেনি। ইন্টারে থাকতে আমার মেয়ে লাইফে সবথেকে বড় একটা ভুল করতে গিয়েছিল কিন্তু আমি বেষ্ট ফ্রেন্ডের মতো আমার মেয়ের সেই ভুলকে ও সুদ্রে দিলাম। একদিন আমার মেয়ে এসে আমাকে বলললো — বাবা আমি মোহন নামের একটি ছেলেকে ভালোবাসি, প্লিজ বাবা তুমি এটা মেনে নেও, আমি ওকে ছাড়া বাঁচবোনা, আমি বুঝেছি আমার মেয়ে আবেগের বয়সে চোখে সব শর্স্যফুল দেখছে কিন্তু আমি মেয়েকে বললাম — বেশ তো মেনে নিবো। আচ্ছা একটা কথা বলতো মা? আমাদের এই দেশে আমরা কী সবজায়গায় যেতে পারি?
— হ্যা বাবা সবজায়গা যেতে পারি।
— না মা, আসলে আমাদের এই দেশে আমরা সবজায়গা যেতে পারিনা, যেমন বর্ডারের সীমান্তে আমরা সাধারণ মানুষরা যেতে পারিনা, সেখানে শুধু নির্দিষ্ট শ্রেণীর লোকেরাই যেতে পারে, ঠিক তেমনি মা এই প্রেম করার একটা নির্দিষ্টতা আছে আর সেই নির্দিষ্টতা হচ্ছে বিয়ে, তুই বরং মোহনকে বিয়ে করে ফেল, ঠিক আছে?
আমার মেয়েটি আমার কথাগুলো শুনে কেমন জানী মাথা নিচু করে চলে গেলো, কিছুসময় পর আমার সামনে এসে বললো — না বাবা আমি এখন বিয়ে করবো না, বিয়ে মানে অনেক ভেজাল।
আমি তখন হেসে- হেসে বললাম মারে তোর এই বয়সটা হচ্ছে আবেগের, চোখে একটা হলুদ চশমা পরে আছিস যার ফলে পৃথিবীটাকে হলুদ দেখাচ্ছে কিন্তু আসলে কী পৃথিবীটা হলুদ?
আমার মেয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো — না বাবা।
— এই জিনিসটাই এই বয়সে তোদের আমরা বুঝাতে পারিনা।
— স্যরি বাবা, আমি এবার থেকে সঠিক পথে চলবো ।
এভাবেই আমার মেয়েটার ভুলগুলোকে আমি একটু- একটু করে ঠিক করে দিয়েছি বিধেয় আজ আমার মেয়ে একজন উচ্চতর শিক্ষিত ব্যক্তি এবং আমার জামাতা পেশায় একজন ডাক্তার পাশাপাশি একজন খাঁটি মানুষ ও বটে। যার কারনে আজ আমি বুক ফুলিয়ে রাস্তায় হাটতে পারি। আসলে স্যার আমাদের পিতামাতার, সন্তানের সাথে সম্পর্কটা একটা বেষ্ট ফ্রেন্ডের মতো হওয়া উচিত, জীবনটা জটিল নয় স্যার, অল্পবয়সী ছেলে- মেয়েগুলো জীবনটাকে জটিল করে ফেলে একজন মা- বাবা নয় একজন বেষ্ট ফ্রেন্ডের অভাবে।
প্রতিনিয়ত ভার্চুয়ালে ছেলে- মেয়েগুলো তাদের মনের কথা প্রকাশ করে কেন জানেন স্যার ? কারন তাদের এই কথাগুলো শুনার জন্য আমাদের যথেষ্ট সময় নেই । তাইতো হাজারো ছেলে – মেয়ে ভুল পথে গিয়ে সুসাইড করে। আমার মেয়ে কেন ভুল পথে যায় নি, জানেন স্যার কারন আমি ওর বাবা নয় বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম আর তাইতো ও আত্মহত্যা নামক জঘন্য অপরাধকে ওর জীবনে কখনো স্থান দেয়নি।
কথাগুলো শুনে বড় স্যার নিশ্চুপ হয়ে গেলো, টপটপ করে চোখেরজলগুলো গড়িয়ে পড়লো তার , হঠ্যাৎ পকেট থেকে নিজের মেয়ের একটা ছবি বের করে কাতর স্বরে বলে উঠলো– স্যরি মা, আমাকে মাফ করে দিস, আমি তোর বাবাই রয়ে গেলাম, বেষ্ট ফ্রেন্ড হতে পারলাম না, আর তাইতো তুই জীবনটাকে জটিল করে ফেললি, এবং ক্রমশ আত্মহত্যার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিলি স্যরি মা, স্যরি।
— বাবা তুমি বেষ্ট ফ্রেন্ড, লাভ ইউ বাবা (সূত্র: ফেসবুক)