করোনা মহামারির ভয়াবহতা কেটে যাওয়ার সঙ্গে নতুন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। তা হলো জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রায় সব ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপি সংকুচিত হয়ে এসেছে কর্মবাজার। এতে মানুষের আয় কমার সঙ্গে কমেছে উৎপাদনও। কিন্তু চাহিদা কমেনি মোটেও। তবে বিলাসী পণ্যের চাহিদায় কিছুটা ছেদ পড়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। বাড়ছে অনবরত। সাধারণ ও খাদ্য উভয় খাতের মূল্যস্ফীতি চোখ রাঙাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে চাপ বাড়ছে মূল্যস্ফীতির। যার ফলে বাজেটে ভর্তুকি বাড়ছে।
ভর্তুকির চাপ কমাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ নানা পরিষেবার দাম নতুন করে আরেক দফা বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার। বাজেটের খসড়া রূপরেখা অনুযায়ী আসছে অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি,প্রণোদনা ও নগদ ঋণে সরকারের ব্যয় বাড়বে অন্তত ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
চলতি বছর এসব খাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়বে অন্তত ২৮ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া এ খাতের বড় ব্যয় হিসেবে ঋণের সুদ পরিশোধেই অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে, এর মধ্যে চলতি বছর বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
তবে আগামী বছরের বাজেটে যে কোনো উপায়ে ভর্তুকির চাপ কমাতে চায় সরকার। এতে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি,গ্যাস,বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পরিষেবার দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সরকার। বাজেটের খসড়া রূপরেখায় বলা হয়,বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা না হলে আসছে বাজেটে শুধু বিদ্যুৎ খাতেই ১৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন হবে।
গ্যাসের ক্ষেত্রে একই রকম পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা। গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা না হলে এ খাতেও আগামি বাজেটে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন হবে।
এ ছাড়া সারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। তবে সারের দাম বাড়ালে সরাসরি কৃষির ওপর এর প্রভাব পড়বে,কৃষকের ওপর ব্যয়ের চাপ বাড়বে বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।
তবু ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করে সরকার।
খসড়া বাজেটের তথ্যানুসারে ভর্তুকি,প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতের মোট জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার প্রয়োজন হবে।
রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে বৈঠকে পরবর্তী বাজেটের রূপরেখা মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অবশ্য শেষ মুহূর্তে প্রধানন্ত্রীর অনুমোদনের আগ পর্যন্ত এসব অঙ্ক যে কোনো সময়ই পরিবর্তনযোগ্য।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে,দীর্ঘ দু’বছরের চলমান কভিড-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চাহিদা,রাশিয়া-ইউক্রেন দামামায় বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে ঋণের চাপ সহনীয় পর্যায়ে আনতে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমানোর চাপও রয়েছে। সেই সঙ্গে আবার মূল্যস্ফীতিও চোখ রাঙাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আগামি অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা এবং দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দার পূর্বাভাস সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখনকার তুলনায় নতুন অর্থবছর বেশ কমে আসবে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
এ জন্য আগামি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছর প্রণোদনা ও ঋণ খাতে প্রকৃত ব্যয় জিডিপির ১ দশমিক ১৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। এটি আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামি অর্থবছর সেটি বাড়িয়ে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা করা হচ্ছে। তবে এটি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করবে।
২৩ এপ্রিল ২০২২
এজি