রোববার (১০ নভেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর রোববার প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বছরের ১৭ জানুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। আজকের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
এদিকে এমবিবিএস ভর্তিতে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বাতিল করার তৎপরতা শুরু হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মালিকেরা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চাপ দিচ্ছেন। চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল হলে ভর্তির ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা বাড়বে। মেধার চেয়ে অর্থই ভর্তির ক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমবিবিএস ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। আজকবে তারিখও নির্ধারণ করা হলো।
মন্ত্রণালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলেছে, অটোমেশন একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি,এটি বাতিল করতে হবে।
১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে দেয়া চিঠিতে সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান ও সাধারণ সম্পাদক মো.মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন,বেসরকারি মেডিকেলের মতো ব্যয়বহুল শিক্ষায় যাঁরা পড়তে ইচ্ছুক, তাঁরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে নিজেদের পছন্দের কলেজে পড়তে চান। অটোমেশনের কারণে অর্থ থাকলেও পছন্দের কলেজে অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না। অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করে আগের ব্যবস্থায় ফিরে গেলে শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সুবিধা হবে।
সব সময় সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শেষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হয়। গত এক দশকে এমবিবিএস ভর্তিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয় ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে। এ পদ্ধতিতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দের কলেজগুলো বেছে নিতে পারেন। এ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির কারণে মেধাতালিকার নিচের দিকে থাকা শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভালো সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়। দেশের ভালো বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছিল।
অটোমেশন পদ্ধতি চালুর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। কলেজ কর্তৃপক্ষ মেধাতালিকায় নিচের দিকে থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে পারত। অভিযোগ উঠেছিল অর্থের বিনিময়ে তালিকায় নিচে থাকা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারতেন। ফলে তালিকায় ওপরের দিকে থাকা মেধাবীরা ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতেন।
দেশে মেডিকেল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি। এ ছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে। ভালো কলেজে ভর্তি হন তালিকার ওপরে থাকা শিক্ষার্থীরা।
এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভিন্ন কোনো পদ্ধতি হওয়া উচিত নয় বলে মনে চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর সংগঠন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েই চুপ করে বসে নেই। তারা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
১০ নভেম্বর ২০২৪
এজি