Home / উপজেলা সংবাদ / হাজীগঞ্জ / ভরণপোষণ চাওয়ায় বৃদ্ধ বাবাকে পিটিয়ে বাড়িছাড়া
ভরণপোষণ

ভরণপোষণ চাওয়ায় বৃদ্ধ বাবাকে পিটিয়ে বাড়িছাড়া

ভরণপোষণ চাওয়ায় বাবাকে পিটিয়ে আহত করে বাড়িছাড়া করেছে তার ছেলে। জীবন সায়াহ্নে এসে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন অসহায় বাবা সৈয়দ আলী (৮০)।

বৃদ্ধের শরীরের নানান জায়গায় দগদগে লাল চিহ্ন (আঘাত)। বয়স হয়ে যাওয়ায় আয়-রোজগার করতে না পেরে নিজের সন্তানদের কাছে ভরণপোষণ চান তিনি। কিন্তু তার এক ছেলে, ছেলের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও নিজ সহধর্মিণী দেখভালের দায়িত্ব না নিয়ে উলটো মারধরের পর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তার।

মঙ্গলবার রাতে এমনটিই অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার শেখপুরা গ্রামে।

জানা যায়, সন্তান ও সহধর্মিণী মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিলে চলে আসেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে। দুদিন বৃদ্ধ সৈয়দ আলীর স্থান হয় খোলা আকাশের নিচে মসজিদ চত্বর ও রাতে পার্শ্ববর্তী রজনীগন্ধা মার্কেটের গলিতে। টানা বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে কাটে তার জীবন।

পরে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর। তারা হাজীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সিফাতকে অবগত করেন।

স্থানীয় মোবাইল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, ইকরাম ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান জানান, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সিফাত বৃদ্ধ সৈয়দ আলীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রাতেই হাজীগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেন।

বৃদ্ধ সৈয়দ আলী জানান, প্রথমে অন্যের নৌকা, পরে ভ্যান চালিয়ে দুই ছেলে নজরুল ইসলাম ও নূর হোসেন এবং দুই মেয়ে কোহিনুর ও কুলসুমাকে বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে ছেলেরা আলাদা সংসার করছেন। কিন্তু তাদের কেউ-ই বাবার ভরণপোষণ দেন না। খুব কষ্টে অন্যের সহযোগিতায় নিজের খরচ চালাচ্ছিলেন। সন্তানদের ভরণপোষণের কথা বললে তারা কয়েকবার সৈয়দ আলীকে শারীরিক নির্যাতন করেন।

বড় ছেলের সোনাপুরে মুদি দোকান, ছোট ছেলে প্রবাসে থাকেন। গত শনিবার দুপুরে বড় ছেলের কাছে কিছু মৌসুমি ফল খেতে চাইলে তিনি তার বাবাকে জানান, ছেলেরা বাবার কোনো ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে পারবে না। এর প্রতিবাদ করলে নিজ সহধর্মিণী রুমেন্নেছা ও বড় ছেলে, ছেলের বউ মারধর করেন এবং বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। পরে সৈয়দ আলী ঘুরতে ঘুরতে হাজীগঞ্জে চলে আসেন।

ভুক্তভোগী বাবা বলেন, বয়স হয়ে গেছে। এখন কি আর শরীরে এত জোর আছে যে কামাই করে খাব। ছেলেদের কাছে তাই ভরণপোষণ চেয়েছি। আর তার জন্য এভাবে ওরা আমাকে মারবে? আমার বাড়ি থেকে আমাকেই বের করে দেবে— এটি মেনে নিতে পারব না। আমি এর বিচার চাই।

বড় মেয়ে কোহিনুর জানান, বাবাকে মারধর করা হয়নি। তিনি বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করে দেন। ভাইদের ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে, আত্মীয়স্বজন এ কারণে বাড়ি আসেন না। তাই আমরা বকা দিলে তিনি অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

এ বিষয়ে বড় ছেলে বাবাকে নিতে না এলেও টেলিফোনে বলেন, তিনি বিছানায় প্রস্রাব-পায়খানা করে দিলে আপনি কি মানবেন? আমার একটা স্ট্যাটাস আছে না।

বাবাকে নিতে কেন আসেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত সময় আমার নেই।

হাজীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সিফাত বলেন, রামগঞ্জের ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠনের কর্মী ও হাজীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রশিদের সহযোগিতায় বৃদ্ধ সৈয়দ আলীর বড় মেয়ে ও নাতিকে প্রায় ৫ ঘণ্টা বুঝানোর পরও তারা নিতে আগ্রহী হন।

রামগঞ্জ থানার ওসি এমদাদ হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ১০ আগস্ট ২০২৩