ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এর প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা নদী। ঝুঁকিতে রয়েছে লক্ষ্মীপুরের উপকূল।
বুধবার ২০ মে সকাল থেকে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে তীব্র স্রোত ও প্রবল ঢেউ উঠেছে। বাতাসে গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একই সঙ্গে রয়েছে ভাঙন আতঙ্ক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আবহাওয়া অধিদফতর থেকে লক্ষ্মীপুরে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আম্ফানের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা নদী। গত দুই-তিনদিনের চেয়ে বুধবার পানির উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট বেড়েছে। উপকূলে প্রবল বাতাস বইছে। একই সঙ্গে মেঘনা উত্তাল হয়ে পড়ায় উপকূলে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু খাবার না দেয়ার অভিযোগে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষগুলো আবার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।
মেঘনা উপকূলীয় এলাকা কমলনগরের মতিরহাট, বাত্তিরখাল ও রামগতি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৯ মে) মেঘনার পানি স্বাভাবিকের চেয়ে এক ফুট বেড়েছিল। ওই দিন রাতভর বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে মেঘনা উত্তাল হয়ে উঠেছে। পানির উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ৩ ফুট। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার ঢেউ আঁচড়ে পড়ছে উপকূলে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলজুড়ে। বুধবার ১২টার দিকে প্রবল বাতাস ও নদীর পানির ঢেউয়ের আঘাতে রামগতিঘাটে একটি মাছ ধরার নৌকা ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
অন্যদিকে সারা বছরই কমলনগর উপজেলার উপকূল মেঘনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এই উপজেলার লুধুয়া, ফলকন, চরকালকিনিসহ মেঘনার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিলীন হয়ে গেছে অনেক ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। প্রতিদিনই ভাঙন আতঙ্কে দিনকাটে এই উপকূলের বাসিন্দাদের। এবার আম্ফানের প্রভাবে মেঘনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলজুড়ে। এ কারণে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে রাজি হচ্ছে না উপকূলের মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪০ বছরেও লক্ষ্মীপুরে মেঘনা উপকূলে ভাঙন আতঙ্ক কাটেনি। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের জনপ্রতিনিধিরা নদী শাসনের জন্য কাজ করবে বলে ভোটারদের আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু ভোট শেষ হয়ে গেলে তারা ভুলে যান নদী শাসনের কথা। আবার উপকূলের অসহায় মানুষগুলোর পাশেও দাঁড়ান না জনপ্রতিনিধিরা।
কমলনগর উপজেলার লুধুয়া এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, মেঘনায় প্রবল স্রোত বইছে। এতে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে প্রবল বেগে বাতাস বইছে। দিনে কিছুক্ষণ সূর্যের আলো দেখা গেছে। আবার কিছুক্ষণ পর পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে চাপা আতঙ্ক কাজ করছে উপকূলের মানুষের মাঝে।
করেসপন্ডেট,২০ মে ২০২০