ঢাকার ৮০ % ভবনে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই : ওয়াসা

ঢাকা শহরের ৮০ % আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবনে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।

শনিবার ৪ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে ওয়াসা ভবনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

চলমান কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ঢাকা ওয়াসা।

মতবিনিময় সভায় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ওয়াসা এমডি বলেন,‘ রাজউক আইনে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবনে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধান রয়েছে। কিন্তু ঢাকার মাত্র ২০ % ভবনে এ ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ভবনগুলো সিটি করপোরেশনের নালায় সরাসরি সংযোগ দেয়া রয়েছে। তাদের ৬ মাসের সময় দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।’

এ সময়ের মধ্যে তা না করলে এ নালাগুলো বন্ধ করে দিবে ডিএনসিসি।

তিনি বলেন,‘এ অব্যবস্থাপনা দূর করতে ঢাকা রাজধানীর দাসেরকান্দি,নারায়ণগঞ্জের পাগলা,উত্তরা,রায়ের বাজার ও মিরপুরে পৃথক পাঁচটি প্লান্ট স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দাসেরকান্দির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়ন হলে খাল-নদী দূষণমুক্ত হবে।’

ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন,‘ ঢাকা ওয়াসার মূল লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব,টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনা। এ লক্ষ্য ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ কর্মসূচির আওতায় নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই পরিক্রমায় ঢাকা ওয়াসা আজ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি রোল মডেল।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানি উত্তোলন ও উৎপাদন সক্ষমতা ২৭০-২৭৫ কোটি লিটার এবং দৈনিক ২৬০-২৬৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার পুরোটাই ঢাকা ওয়াসা সরবরাহ করছে ।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির ৩৩ % ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয় জানিয়ে তাকসিম এ খান বলেন, ‘আর ৬৭ ভাগ পানি ভূ-গর্ভস্থ উৎস তথা গভীর নলকূপ হতে আসছে। ২০২৩ সাল নাগাদ ঢাকা শহরে সরবরাহকৃত পানির ৭০ ভাগ আসবে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে। অবশিষ্ট ৩০ % ভূ-গর্ভস্থ তথা গভীর নলকূপ থেকে।’

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ১৫৬টি পানির পাম্পে এসসিডিএ স্থাপন করেছে। এতে পাম্পগুলি সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুমে বসে মনিটরিং ও পরিচালনা করার সুবিধা হয়েছে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

ঢাকা শহরে ১৪৫টি ডিএমএ’র মধ্যে এ পর্যন্ত ৭১টি ডিএমএ স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তাকসিম এ খান বলেন,‘ অবশিষ্ট ডিএমএগুলোর কাজ চলমান আছে যা জুন, ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ডিএমএ হল এলাকা ভিত্তিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থার একটি আধুনিক পদ্ধতি। কোনও এলাকায় পানির স্বল্পতা দেখা দিলে পার্শ্ববর্তী ডিএমএ হতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ইমপোর্ট হবে বা উদ্বৃত্ত হলে পার্শ্ববর্তী ডিএমএতে এক্সপোর্ট হবে ।’

রাজধানীর সবগুলো জোনে গ্রাহকদের সমস্যা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তিকল্পে ডিজিটাল কলসেন্টার ওয়াসা লিংক ১৬১৬২ চালু আছে। নগরীর যানজট পরিস্থিতি বিবেচনা করে পাম্প ব্রেকডাউন হলে তা সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে চালু করার লক্ষ্যে আবারও ৩টি সাব-অফিস চালু করা হয়েছে।

পরিবেশবান্ধব পানি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসার চলমান কয়েকটি প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন,‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প,ফেজ-৩ এর প্রস্তুতিমূলক কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।’

এপ্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমরা দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানিশোধন করে নগরীতে সরবরাহ করতে পারব। এডিবি,এএফডি, ইআইবি এবং কেএফ ডব্লিউ’র আর্থিক সহায়তায় মেঘনা নদী থেকে পানি এনে শোধনের জন্য ‘গন্ধবপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নগরীতে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে।

আশা করা যাচ্ছে- ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ ৭০ % পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে আর মাত্র ৩০ % পানি ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।

বার্তা কক্ষ, ৪ ডিসেম্বর ২০২১
এজি

Share