চাঁদপুর নৌপথের ৭১৩ কিলোমিটার এলাকায় বয়া-বিকন বাতির সংকটে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত ২৬টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই দ্রুত এ সংকট সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। বিষয়টি জানিয়েছেন চাঁদপুরের ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ।
নৌপথের গভীর চ্যানেল ও নাব্য সংকটপূর্ণ চ্যানেল চিহ্নিত করে বয়া ও বিকন বাতি। তবে অনেক বয়ার মধ্যে নেই প্রতিফলন টেপ। এছাড়া, বয়াগুলো নৌপথে জাহাজ দুর্ঘটনা রোধে বসানো হয়। সেই সঙ্গে ডুবন্ত চরেও এগুলো ব্যবহার করা হয়। আর লাইটার বয়াগুলো নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে বসানো হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু স্থানেই দিক-নির্ণায়ক এসব যন্ত্রপাতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
এ সম্পর্কে চাঁদপুরের পাইলট তোফায়েল আহমেদ সুমন জানান, রাতে নদীতে নৌযান চলাচলে বয়া ও বিকন বাতির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে চলমান বর্ষা মৌসুমে এগুলো দিক- নির্ণায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এসব বয়া-বিকন বাতি নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই।
চাঁদপুরের পাইলট পরিদর্শক মো. নুরুন্নবী জানান, নদীতে এসব বয়া-বিকন বাতি অনেকাংশেই জেলে ও দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে যায়। আবার অনেক সময় বাল্কহেডের ধাক্কায় এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই এগুলো রক্ষণা-বেক্ষণ ও নিরাপত্তায় সচেতনতা জরুরি।
এ বিষয়ে নিহারীকা জাহাজের মাস্টার সাইফুল রহমান দুলাল বলেন, আমরা সারাদেশে ৩টি জাহাজের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে বয়া বিকন বাতিসহ এসব সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেই। আর চাঁদপুর রুটে নিহারীকা জাহাজটি দিয়েই মালামাল বেশি আনা হয়। আমরা সর্বদা মাল আনায়ন করতে তৎপর রয়েছি।
এ সম্পর্কে নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ মধ্য ব-দ্বীপ চাঁদপুর শাখার যুগ্ম পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান থানদার জানান, চাঁদপুর নৌপথ অ লে ৮০টি বিকন বাতি ও ১৬টি বয়া রয়েছে। বিকন বাতিগুলোর মধ্যে লালটা উজানের বামে এবং সবুজটা উজানের ডানে বসানো হয়। আমাদের কাছে এখনো আরো ৭টি বয়া মজুদ রয়েছে। যখন যেখানে এগুলো বসানো প্রয়োজন আমরা সেখানেই এগুলো বসানোর উদ্যোগ নেই। তবে চাঁদপুর নৌপথের জন্য এগুলো পর্যাপ্ত নয় বলেও তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে, চাঁদপুর থেকে ঢাকাসহ বরিশাল-বরগুনাগামী লঞ্চের চালক মো. শহিদুল ইসলাম, মো. শাহজালাল, বাসু দেব, মনির, মোস্তফা কামাল ও আবুল কালাম আজাদসহ আরো চালক বলেন, নদীতে স্রোত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বয়া-বিকন বাতি ভেসে অন্য দিকে স্থানান্তরিত হয়। এতে প্রয়োজনীয় স্থানে এসব যন্ত্রপাতি না থাকায় ভুল পথে নৌযান চালিয়ে প্রায়ই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় অনুমান নির্ভর হয়ে আমাদের লঞ্চ চালাতে হয়। জরুরি অবস্থায় নদীর মাঝ পথে ফগ লাইট জ্বালিয়ে লঞ্চ নোঙ্গর করতে হচ্ছে।
তারা আরো জানান, চাঁদপুর নৌপথের মধ্যে চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-মাওয়া, চাঁদপুর-হরিণা, চাঁদপুর-জনতা বাজার, চাঁদপুর-বরিশাল রুটের অনেক স্থানেই পথ নির্দেশক বয়া-বিকন বাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। কাগজে কলমে বাঁশের মার্কার বাতির কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তার হদিস পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বরিশাল ও বরগুনা রুটে এসব নেই বললেই চলে। যার কারণে রাতে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েই লঞ্চ চালাতে হয়। তাই এসব বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।
নদীতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড স্টেশন চাঁদপুরের নির্বাহী কর্মকর্তা এম ইছহাক আলী জানান, নদী পথে বয়া-বিকন বাতিসহ দেশের সম্পদ রক্ষায় আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমরা দুর্বৃত্ত ও চোরচক্রের বিরুদ্ধে নদী পথে সর্বদা তৎপর রয়েছি।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটি)-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার জানান, দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা এসব বিকন বাতির দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। তবুও আমরা আমাদের সাধ্যমত এ সংকট সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতি মাসে ডুবচর নির্ধারণ করে ঠিকাদারের মাধ্যমে ১’শ ২০টি বাঁশ পুঁতে নাব্যতা সংকট এলাকা চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর ওই বাঁশের উপর সঙ্গে সঙ্গেই মার্কা লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে চালকরা সঠিক পথ নির্ধারণ করে নৌযান চালাতে পারছেন। তবে ঝুঁকি রোধে দক্ষ চালক/মাস্টার দ্বারা নৌযান চালানোর ব্যাপারে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
প্রতিবেদক : শরীফুল ইসলাম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০