হাজীগঞ্জ

বড় হওয়ার জন্যে গ্রাম কোনো বিষয় নয় : এসপি শামসুন্নাহার

চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকে সমাজ থেকে মাদক, বাল্য-বিবাহ, ইভটিজিং, জঙ্গিবাদ দূর করতে হবে। প্রত্যেককে স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সে স্বপ্ন বাস্তাবায়ন করার জন্য তার পেছেনে লেগে থাকতে হবে। আমার দাদা নানা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছে। আপনারা যারা অভিভাবক রয়েছেন তারাও আপনাদের সন্তানদের স্বপ্ন দেখানো পাশাপাশি তাদের স্বপ্ন পুরণে সহযোগিতা করবেন।’

বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে হাজিগঞ্জের কাঁলচো ইউপির সিহিরচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।

তনি আরো ,‘ ব্যক্তি জীবনে আমার দাদা নানার স্বপ্ন ছিলো আমাকে জজ-ব্যারিস্টার বানাবে। কিন্তু ল’তে সুযোগ না পেয়েও আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখেছি। যার ফলে আজকে আমি পুলিশ সুপার হতে পেরেছি। মূলত গ্রামে বড় হওয়ার কারণেই পুলিশের চাকরির প্রশিক্ষণে আমার কাছে কোনো কষ্ট লাগেনি। গ্রামের বড় হওয়ায় অনেকের চেয়ে আমি অনেক সুবিধা পেয়েছি। তাই বড় হওয়ার জন্য গ্রাম কোনো বিষয় না। বিষয় হলো উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য ঠিক রাখা।’

অভিভবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,‘সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে বড় করতে হবে। এখন আর পুরুষের চেয়ে মেয়েরা কোনো অংশে কম নয়। তাই আপনার ছেলে এবং মেয়েকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বড় করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে তা’বাস্তবায়ন করতে হলে প্রত্যেকের ঘর থেকে কাজ শুরু করতে হবে। প্রত্যেকের জায়গা থেকে আমাদের মাকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাল্য বিয়েকে অনেকেই শুভ কাজ মনে করেন কিন্তু এটি আসলেই একটি অশুভ কাজ। তাই আপনার মেয়েকে উপযুক্ত এবং স্বাবলম্বি না করে বিয়ে দিবেন না। ’

জঙ্গিবাদরোধে সচেতন হওয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন,‘ পৃথিবীর কোনো ধর্ম মানুষ হত্যার কথা বলেনি। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) ধর্মের দাওয়াত দিয়েছেন। অথচ আজকে কিছু মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। তারা কখনোই মুসলমান নন ; তারা ধ্বংসকারী। আমাদের সন্তানদের প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে। জঙ্গিবাদকে রুখে দিতে হবে। আজকের অনুষ্ঠানের সংবর্ধিত অতিথি মাদক,সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে ২ হাজার গেঞ্জি দিয়েছেন। আমি আজের এ অনুষ্ঠানে ওনাকে আবারো ধন্যবাদ জানাই। সমাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি এ আয়োজন করেছেন। তিনি একজন ভালো ও পরিশ্রমী মানুষ। পরিশ্রমের মধ্যদিয়েই আজকে তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং সিআইপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন । এটি এলাকার জন্য গর্বের বিষয়।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সিহিরচোঁ গ্রামের কৃতি সন্তান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিআইপি জয়নাল আবেদীন মজুমদার ।

জয়নাল আবেদীন মজুমদার বলেন, ‘এ গ্রামের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। তাই আমি চাই এ গ্রামটি চাঁদপুর জেলার একটি আদর্শিক গ্রাম হয়ে উঠুক। একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সহজ কিন্তু টিকিয়ে রাখা অনেক কঠিন কাজ। একটি প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্যে ওই এলাকার সকল মানুষকে সহযোগিতা করতে হয়। আমি আশা করি,‘এ বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রাখতে এলাকার সকল পর্যায়ের মানুষ সহযোগিতা করবেন।’

তিনি আরো বলেন,‘আমি মনে করি শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া দেশ এগোতে পারে না। তাই শিক্ষার উন্নয়ন করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হলে তাদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আজকে আমাদের যে সম্মান দেয়া হয়েছে তাতে আমি এ এলাকার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং ঋণী রয়ে গেলাম। তিনি তার বক্তব্যে হাজিগঞ্জ উত্তরে একটি পুলিশ ফাঁড়ির করার দাবি রাখেন।

সিহিরচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মো.খোরশেদ আলম, হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদুল ইসলাম, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল, চেয়াম্যান মানিক হোসেন প্রধানীয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ধড্ডা ময়াজ্জেম হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জামাল উদ্দিন, ও নেছারাবাদ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।

অতিথিদের বক্তব্যে শেষে বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়া হয়। পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিদের ক্রেস্ট তুলে দেন ।

প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়

Share