“খুব চিন্তা ভাবনা করেই আজ আমি আমার মনের কথা গুলো লিখছি। আসলে আমার জীবনের কিছু ঘটনা নিয়ে খুবই হীনমন্যতায় ভুগছি। শুরু থেকে বলছি। আমার বাবা মা ২ জনই সরকারী চাকুরীজীবী এবং ২ জনই খুব ভালো পোষ্টে আছেন।
সংসারে হয়তো টাকা পয়সার কোন অভাব নেই। কিন্তু অভাব আছে ভালবাসার। ভালবেসে বিয়ে করলেও আমার মা জীবনে সুখ পায়নি। কারণ মা ছিল বাবার ২য় স্ত্রী। আমার বড় মা এখনও জীবিত ও সেখানে আমার এক ভাই আছে। মাকে যেন কোন কটু কথা শুনতে না হয় সে জন্য মা আমার ওই ভাইকে আদরের কোন কমতি রাখেনি।
আমার নিজের বড় এক বোন আছে। এতো কিছু বলার কারণ এখান থেকেই শুরু আমার জীবনের ঘটনা। ভালবেসে বিয়ে করা সত্ত্বেও মায়ের অশান্তি, ১৩ বছরের সম্পর্ক ভেংগে বোনের কষ্ট দেখে নিজের মধ্যে ভালবাসার প্রতি একটা অভক্তি চলে আসে। আমি এখন একটা প্রাইভেট ইউনিভাসিটিতে পড়ি। ২ বছর আগে আমার বোনের এক বন্ধু আমাকে প্রোপোজ করে। সে আমার থেকে ৪ বছরের বড়। তখন আমি মাত্র ইন্টার পাশ করলাম। শুরুতে তাকে পাত্তা দিতামনা। আর আমি আপুকে সব বলতাম। কিন্তু আপু জিনিসগুলা আমলে নিতোনা। তার সাথে আমি অনেক খারাপ ব্যাবহার করতাম।এমনকি ফেইসবুক এও ব্লক করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমাকে অনেক করে বুঝাতো। আপুর ফ্রেন্ড হিসেবে আমার নাম্বার পাওয়াও তার জন্য কঠিন কিছু ছিলনা। সে আমাদের ফ্যামিলির ব্যাপারে সব জানতো। আমাকে অনেক বুঝাতো।
একসময় তার প্রতি দুর্বল হয়ে যাই। এই বছর ফাল্গুনে তার সাথে প্রথম দেখা হয় তাও ৫ মিনিটের বেশি ছিলাম না। জীবনে এই প্রথম কেউ আমাকে ফুল দেয়। তখন থেকেই শুরু হল তার প্রতি ভাললাগা। এরপর দেখা হয় ১৪ এপ্রিল। অবশেষে মে এর ৬ তারিখ এ তাকে হ্যাঁ বলে দেই। কিন্তু তারপর জানতে পারি যে সে একজন মাদকাসক্ত। সে নিয়মিত গাঁজা খায়। সে বলে সে আমাকে সত্যি খুব ভালবাসে আর আমাকে ঠকাতে চায়না তাই সত্যি বলে। শুরুতে খুব কষ্ট পেলেও পরে মানিয়ে নেই। ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তার অনেক রিলেশন ছিল এর আগে কিন্তু সে তাদের নিয়ে তেমন সিরিয়াস ছিলনা যতটা আমাকে নিয়ে সিরিয়াস। কিছুদিন পরেই জানতে পারি তার একজনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিল এবং সে তারই এক ম্যাডাম। আপু,কয়েক মুহূর্তের জন্য আমার দুনিয়া উলট পালট হয়ে গিয়েছিলো। অনেক কেঁদেছিলাম। কিচ্ছু বুঝতে পারছিলামনা কী করব। এক মাসের ব্যাবধানেই সম্পর্কটা আমিই শেষ করে দেই। এছাড়া কোন উপায় দেখছিলামনা। সে নিজেও আমাকে তখন জোর করেনি আর। এই বছর সে ইউ এস এ চলে যাবে আর এজন্য সে আমাকে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা। আমিও তাই সরে আসাটাই ঠিক মনে করেছিলাম ।
কিন্তু তারপরও আমি ফিরে আসতে পারিনি।ভালবাসার টানে আবার ফিরে গিয়েছিলাম। জুলাই ১৭ তারিখ। পাক্কা ১ মাস ১০ দিন পর দেখা হয় আমাদের। সে বলে সে নাকি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। আর সে নেশা ছেড়ে দিবে। আমাকে এও বলে ইউ এস এ থেকে ২ বছর পর এসে আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিবে। আমিও সব অন্ধের মত বিশ্বাস করলাম। বিনিময়ে পেলাম আবার ধোঁকা। বড় আপু আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা জেনে যায়। আমি নিজেই বলি। আমিতো ওকে সত্যি ভালবাসি। তাই কিছু লুকাতে পারিনি। আপুর কাছেই ওর আরও কিছু খারাপ দিক শুনি। আপু বলে ওর সাথে সম্পর্ক রাখলে আমি আপুর মরা মুখ দেখব। আবার সেই ফিরে আসা। ও এবারো জোর করলনা। আমিও চাইনা আমার জন্য আপুর আর তার ফ্রেন্ডশিপ খারাপ হোক। আগস্ট এর ১১ তারিখ ও ইউ এস এ চলে যায়। যাওয়ার আগে দেখাটাও করে যায়না। কিন্তু সেখানে গিয়েও আবার ওর কান্না। ইমোতে ফোন দিয়ে শুধু কাঁদত,সাথে আমিও। কিছুদিনের জন্য সব ভুলে যাই আপুর কথা। তার সাথে লুকিয়ে কন্টাক্ট করি। প্রতিদিন কথা বলি। সবই ভালো যাচ্ছিল। ও সেখানে যাওয়ার ৩ দিনের মাথায় হঠাৎ একদিন আমাকে খুব খারাপ একটা প্রস্তাব দেয়। আশা করি বুঝতে পারছেন। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একদিন সে নিজেই আমাকে তার কিছু নোংরা ছবি পাঠায়। সাথে ওই দেশের এক নুড মেয়ের সাথে তার নোংরা ছবি। খুব খারাপ ব্যবহার করি তার সাথে। খুব কান্না করি। তার মতে ভালোবাসা মানেই শারীরিক। এটাই তার কাছে সব। সে তখন আবার বলে তার সাথে থাকলে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আমি যেন তাকে ভুলে যাই আর তাকে ঘৃনা করি। তখনো তাকে বুঝাই। পরে বুঝলাম আসলেই আমার ভাগ্যে সে নাই। তারপর থেকেই আমার মনে হয় ভালবাসা মানেই হয়তো শরীর কেন্দ্রিক।
এরপর থেকেই একটা মানসিক যন্ত্রনার শিকার আমি। আমার এ যন্ত্রনার জন্য শুধু এটাই কারণ না। শুনতে খারাপ হলেও সত্য,খুব ছোট যখন ছিলাম তখন আমারই বড় ভাই (বাবার আগের পক্ষের ছেলে) এর দ্বারা আমি যৌন নির্যাতনের এর শিকার হই। যখন বুঝলাম তখন থেকেই আমার ভাইকে খুন করার ইচ্ছা করতো। ২ বার ট্রাই করেছিলাম। এখন আমার সেই ভাই একজন ইঞ্জিনিয়ার। এখন কি আপু বুঝতে পারছেন আমি কেন মানসিক যন্ত্রনার শিকার? ইচ্ছা না থাকলেও আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হয়,চলতে হয় শুধুমাত্র সমাজে চলার জন্য। আমার বাবা মা কিছুই জানেনা। এরপর থেকে আমি সবাইকেই ভয় পাই। ছেলেমানুষ দেখলেই মাথা গরম হিয়ে যায়। আচ্ছা আপু,ভালবাসা মানেই কি শুধুমাত্র শরীর কেন্দ্রিক? আমার মনে হচ্ছে আমি আর কাউকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে মানতে পারবনা। আপু,আপনিই বুকে হাত দিয়ে বলুনতো,এসব জানলে কি কোন ছেলে আমাকে গ্রহন করবে? আমিতো কাউকে ঠকাতে চাইনি,নিজেও ঠকতে চাইনি। আমার সাথে কেন এমন হল? আমি এখন কী করব? আমার মা বোন ২ জনই ডাক্তার। তাই পারছিওনা কোন মানসিক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে। নিজে থেকে যতটুকু পারছি নরমাল হতে। কিন্তু এখন আর পারছিনা। আশা করি আমাকে সাহায্য করবেন।”
পরামর্শ:
আমি কিছু কথা বলবো তোমাকে আপু, যদি পড়ে বুঝতে পারো তাহলে আশা করি তোমার জীবনের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে।
প্রথমত, তোমার মায়ের জীবনের অশান্তি বা অসুখের জন্য কেবল পিতাকে দায়ী করো না। সমান দায়ী তোমার মাও। তিনি তোমার বাবার সাথে পরকীয়া প্রেম করে আরেকজনের সংসার ভেঙে বিয়ে করেছেন। এমন বিয়েতে সুখী হবার সভাবনা আসলে খুবই কম থাকে, মাঝখান থেকে বাচ্চাদের জীবনগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সেটার অর্থ এই নয় যে মা জীবনে যেসব ভুল করেছে সেগুলো তোমাকেও করতে হবে। মা ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিলেন, তোমার মাঝেও সেই প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। তাই আমার প্রথম অনুরোধ, নিদেন পক্ষে অনার্স শেষ হবার আগে কোন ক্রমেই কোন প্রেমের সম্পর্কে জড়াবে না তুমি।
দ্বিতীয়ত, তোমার বয়স অনেক কম আর তুমি খুব আবেগী সেটা চিঠি পড়েই বুঝতে পারছি। এইসব কারণে সম্পর্কটা নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামাচ্ছ। যেসব আবেগের কথা তুমি লিখেছো, বাস্তব পৃথিবীতে সেগুলো একেবারেই অচল। তুমি একটা বাজে লোকের সাথে আবেগের বশে প্রেম করেছিলে। খুবই ভালো হয়েছে যে তার সাথে তোমার সম্পর্ক নেই। লোকটা তোমার চাইতে বয়সে বেশ বড় আর তার একটাই উদ্দেশ্য ছিল- তোমার সাথে যৌন সম্পর্ক করা। ফোনের মাঝে কান্নার নাটক করা বা নেশার ঘোরে কান্নাকাটি করা আসলে এক রকমের ভড়ং। কমবয়সী মেয়েরা সহজেই এতে পা দেয়। একে ভালোবাসা বলে ভুল করার কোন কারণ নেই। একটা জিনিস মনে রাখবে আপু, খারাপ মানুষ কখনো বদলায় না। সেসব কেবল সিনেমাতেই সম্ভব। তাই ভালোবাসা দিয়ে খারাপ প্রেমিককে ভালো বানিয়ে ফেলবে, এইসব ভ্রান্ত ধারণা মনে রাখবে না। তুমি সিনেমার নায়িকা নও।
না, ভালোবাসা মানে কেবল শরীর না। আবার ভালোবাসার সাথে শরীরের সম্পর্ক অস্বীকারও করা যায় না। ভালোবাসায় শারীরিক সম্পর্ক তখনই সুন্দর হয়ে উঠবে, যখন তুমি কারো স্ত্রী হবে। আর শোনো, তোমার সাথে এমন কিছুই হয়নি যার কারণে কেউ তোমাকে ভালবাসবে না বা গ্রহণ করবে না। আর এই গ্রহণ করাকরির প্রশ্নটা আসছেই বা কীভাবে? তুমি যৌন নির্যাতনে শিকার হয়েছো, যৌন নির্যাতন করোনি… তাহলে তোমার দোষটা কী? শোন মেয়ে… মানুষের পবিত্রতা বা যোগ্যতার বিচার তার শরীর দিয়ে হয় না। আমাদের সমাজের খুব ভুল একটা ধারণা আছে যে মেয়েদের জন্য শরীরই সব। তাই ধর্ষিতা হলে বা যৌন নির্যাতনের শিকার হলে মেয়েদের দোষ, তাঁদের জীবনটাই নষ্ট, তাঁদেরকে কেউ ভালবাসতে পারবে না।
এগুলো একেবারেই ফালতু কথা, এই ধারণা থেকে তোমার নিজেকেই বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশে এমন পুরুষের কোন অভাব নেই যারা মেয়েদেরকে মানুষ মনে করেন এবং এইসব বস্তাপচা ধারণায় বিশ্বাসী নন। আর যে পুরুষ তুমি যৌন নির্যাতনের শিকার বলে তোমাকে অপবিত্র মনে করবে, বা কয়েক মাসের প্রেমের জন্য তোমাকে খারাপ মনে করবে… তেমন ক্ষুদ্র মনের পুরুষের সাথে সম্পর্ক করার আমি তো কোন দরকার মনে করছি না।
তুমি আপাতত লেখাপড়ায় মন দাও। নিজের ক্যারিয়ার গোছানোর দিকে মন দাও। তোমার ভাই যা করেছে, সেই ব্যাপারটি অবশ্যই বড় বোনকে খুলে বলবে। এইসব কথা কখনো গোপন রাখতে হয় না। তুমি দোষ করোনি যে গোপন করবে। প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ জীবনে অনেক পাবে। যে অপমানটা ওই ছেলে তোমাকে করেছে, ঠিক সেটাই তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ারও সুযোগ আসবে। কিন্তু তার আগে তোমাকে ওই ভাইয়ের চাইতে অনেক বেশি যোগ্য হতে অবে। তখন নিজেই বুঝে যাবে কীভাবে তাঁকে উচিত সাজা দেয়া যায়। (তথ্যসুত্রঃ প্রিয় সম্পর্ক)
নিউজ ডেস্ক ।। ০৬:০০ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৫, শুক্রবার
ডিএইচ