চাঁদপুর

‘বড় ভাইকে’ সালাম না দেয়ায় খুন : চাঁদপুরের খালার বাসা থেকে গ্রেফতার

এলাকার বড় ভাই অনন্তকে সালাম না দেয়ায় রহমতকে হত্যা করা হয়। অনন্তকে গ্রেফতার করা হয় চাঁদপুরে তার খালার বাসা থেকে।

রিনা বেগম আর আবদুস সাত্তার দম্পতির একমাত্র ছেলে রহমত উল্লাহ। মা–বাবার সঙ্গে রাজধানীর মহাখালীর হাজারীবাড়ী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। রহমতের বাবা আবদুস সাত্তার মহাখালীতে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। আর ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন রহমত উল্লাহ।

গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, শুক্রবার রহমত মহাখালীর একটি মসজিদে তার বাবার সঙ্গে নামাজ পড়েন। তারপর রহমত চা খেতে যান মহাখালীর আমতলায়। সেখানে আসেন একই এলাকার অনন্ত নামের এক তরুণ। বড় ভাই হিসেবে অনন্তকে সালাম দেননি রহমত। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রহমতকে ছুরিকাঘাত করেন অনন্ত। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে রহমত মারা যান।

এ খুনের ঘটনায় রহমতের বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে অনন্তকে আসামি করে রাজধানীর বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা করার তিন দিনের মাথায় গ্রেফতার হয়েছেন একমাত্র আসামি অনন্ত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত অনন্তকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

নিহত রহমতুল্লাহর বাবার বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, রহমত উল্লাহ নরসিংদীতে কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে হাফেজ হন। পরে মহাখালী এলাকায় ফিরে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা শুরু করেন।

রহমত খুন হওয়ার বিষয়ে তার মা রিনা বেগম বলেন, আগে কখনো তিনি অনন্তের নাম শোনেননি। তার ছেলেও কোনোদিন অনন্তের নাম বলেননি। অনন্তরা এক পাড়ায় থাকেন, আর তারা অন্য পাড়ায় থাকেন। শুক্রবার তার ছেলের দোকান বন্ধ ছিল। রাত আটটার দিকে দুই বন্ধুর সঙ্গে মহাখালীর আমতলীতে যান রহমত। সাড়ে আটটার দিকে ছেলের মোবাইল নম্বরে ফোন দেই। তখন মোবাইল বাজতে থাকে। কেউ ধরছিল না। পরে জানতে পারি, বড় ভাই হিসেবে অনন্তকে সালাম না দেয়ায় তার ছেলেকে ছুরি মেরে খুন করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, রহমত উল্লাহ খুন হওয়ার পর খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন—এলাকায় কোনো প্রকারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না তিনি। ব্যবসায়িক কাজেই সব সময় ব্যস্ত থাকতেন।

অন্যদিকে অনন্ত বখাটে ছেলে। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। খুনের কারণ হিসেবে জানতে পারেন, বড় ভাইকে সম্মান হিসেবে সালাম না দেয়ার কারণে অনন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে রহমতকে ছুরিকাঘাতে খুন করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম বড় ভাই হিসেবে সম্মান না করার কারণে রহমত উল্লাহকে খুন করেছে আসামি অনন্ত। ও লেভেলে পাস করার পর আর কোনো লেখাপড়া করেনি অনন্ত। আদালতের অনুমতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কারণসহ সব ধরনের তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, অনন্তের বাবা বেঁচে নেই। অনেক আগে দুর্ঘটনায় তার বাবা মারা যান। মায়ের সঙ্গে মহাখালীতে নিজেদের ফ্ল্যাটে বসবাস করেন তিনি। তবে কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না অনন্ত।

যে ছুরি দিয়ে রহমতকে খুন করা হয়েছে আসামির দেখানো মতে মহাখালীর গাউসুল আজম মসজিদের পাশ থেকে সেই ছুরি জব্দ করেছে পুলিশ।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,৪ মার্চ ২০২০

Share