সারাদেশ

বড় বোনের অপরাধে ছোট বোন কারাগারে!

বড় বোনের নাম শুধুই লাকি। আগে-পরে কিছু নেই। তাঁর ছোট বোনের নাম মুক্তা বেগম। কিন্তু পাসপোর্টে তিনি নিজের নাম দিয়েছেন লাকি আক্তার মুক্তা। আর এখানেই বিপত্তি। বড় বোনের নামের সঙ্গে মিল থাকায় তিন মাস জেল খাটতে হয়েছে লাকিকে।

আদালতের নথি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছোট বোন মুক্তা সোনা চোরাচালান মামলার আসামি। পাসপোর্টের নামে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন লাকি আক্তার মুক্তার নামে। কিন্তু গত বছরের ১৭ নভেম্বর পুলিশ প্রকৃত আসামি ছোট বোন লাকি আক্তার মুক্তাকে গ্রেপ্তার না করে বড় বোন লাকিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান করে দেয়।

সেই থেকে তিনি কারাগারে। এরপর মূল আসামি গত বৃহস্পতিবার লাকি আক্তার মুক্তা ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি মামলার প্রকৃত আসামি। আমার বোন লাকি নির্দোষ। তাকে মুক্তি দিন।’ আসামির এমন বক্তব্যের পর ঢাকার ১৬ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবুল কাসেম নির্দোষ বড় বোন লাকিকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন। কারাগারে পাঠান ছোট বোন মুক্তাকে।

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, মূল আসামি লাকি আক্তার মুক্তা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করায় এটি স্পষ্ট যে, পূর্বে গ্রেপ্তার লাকি মামলার আসামি নন। তাই তাঁকে মুক্তির আদেশ দেওয়া হলো। আর মামলার প্রকৃত আসামি লাকি আক্তার মুক্তাকে কারাগারে পাঠানো হোক।’

নিরপরাধ লাকি আদালত এলাকায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তিনি বলেন, ‘যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন আমি পুলিশকে বারবার বলছিলাম, আমার নাম শুধুই লাকি। আসামি না। আমি নিরপরাধ। আমার ছোট বোন আসামি। ওর নাম লাকি আক্তার মুক্তা। আমাকে আপনারা গ্রেপ্তার করতে পারেন না। এর পরও আমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই থেকে আমি জেল খাটছি। আমি এর বিচার চাই।’

নিরপরাধ লাকিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দিয়েছিলেন যাত্রাবাড়ী থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) শামসুল হক। কেন নিরপরাধ লাকিকে গ্রেপ্তার করা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে এএসআই শামসুল হক জানান, ‘বড় বোনের নাম লাকি। আবার ছোট বোনের নামের এক জায়গায় লাকি রয়েছে। এই দুজনের স্বামীর নামেরও কিছু মিল আছে। বড় বোনের স্বামীর নাম হারুন দেওয়ান আর ছোট বোনের হারুন-অর-রশীদ। নামের মিল থাকায় লাকিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান করি।’

নথি থেকে জানা যায়, গত বছরের ১২ এপ্রিল এক কেজি সোনাসহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন লাকি আক্তার মুক্তা। পরে তাঁর নামে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। ওই বছরের ৯ জুলাই জামিন হয় লাকির। এর পর পরই ছাড়া পান আসামি মুক্তা। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘সোনা চোরাচালানের জামিন মাদকে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি জানাজানি হলে ওই বছরের ৩০ আগস্ট লাকি আক্তার মুক্তার জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। এরপর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। পরে বিচারিক আদালত লাকি আক্তার মুক্তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এই পরোয়ানার সূত্র ধরে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ নিরপরাধ লাকিকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। (প্রথম আলো)

Share