বড়লোকের সুবিধায় ঢাকনা বিহীন ড্রেনে শিশুর মৃত্যু

বুধবার(১৩ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে ড্রেনের পাশে খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে শিশুর করুন মৃত্যু হয়।

ভ্যানচালক শাহ আলম ও গৃহবধূ রুবি আক্তারে ছোট মেয়ে সানজিদা। বেলা ৩টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার তৎপরতা চালায় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। ডুবুরিরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে কয়েকঘণ্টা বিরতি দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে আবার উদ্ধার অভিযানে নামে তারা।

সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে শিশু সানজিদার মরদেহ খোঁজে পান ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ইউনিটের সদস্যরা।

রাজধানীর নাখালপাড়ার ভাণ্ডারী মাজারের পাশ থেকে শুরু করে মহাখালী হয়ে একটি বড় ড্রেন গিয়ে পড়েছে হাতিরঝিলে। নিকেতন গেট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ড্রেনটির উপর বা পাশে নেই কোনো প্রটেকশন। তবে নিকেতন এলাকায় ওই ড্রেনের উপর ঠিকেই ঢাকনা রয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ মহাখালীতে ড্রেনে ডুবে শিশু সানজিদার মৃত্যুর পেছনে দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ড্রেনটি খোলা থাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গভীর ড্রেনের পাশে কোনো দেয়াল না থাকা বা ঢেকে না দেয়ার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটতে পারে বলে ধারণা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ১০ ফিট গভীর ও প্রায় ১৬ ফিট প্রস্থের ড্রেনটি খোলা পড়ে আছে অনেকটা জায়গাজুড়ে। নাখালপাড়া থেকে শুরু করে নিকেতন গেট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ড্রেনটির উপর বা পাশে নেই কোনো প্রটেকশন। মাঝে মাঝেই ড্রেনের পাশে খেলতে গিয়ে শিশুরা পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা।

দক্ষিণ মহাখালীর বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এই ঘটনা নতুন না। ড্রেনের পানিতে ছেলে-মেয়েরা পড়ে যাওয়ার খবর শুনা যায় প্রায়ই। কাছাকাছি কেউ দেখে তোলে ফেললে বা সাঁতার কেটে উঠে আসার কারণে হয়তো সানজিদার মতো মৃত্যুবরণ করতে হয় না।’

দু’জন মানুষের সমান গভীর ড্রেনটি উন্মুক্ত থাকার কারণেই শিশুটি পড়ে গিয়ে মারা গেছে উল্লেখ করে চা বিক্রেতা মনোয়ার মিয়া বলেন,

‘সানজিদা মরছে, সাংবাদিকরা আইছে, এখন সবাই ঘটনা জানবো। এই ড্রেনটার কাজ শেষ হইছে আইজ প্রায় দেড় বছর। কিন্তু কোনো ঢাকনা দেয়া হয় নাই, এইভাবেই পইড়া আছে। দুইজন মানুষের সমান গভীর এই ড্রেন। এইখানে এতো ময়লা, পড়লে আর বাঁচার সুযোগ নাই।’

উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাসির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই ড্রেনটি পাকা করার কাজ হয়েছে আগে, কাজ শেষ হয়েছে না এখনও বাকি আছে তা আমার জানা নাই। তবে এতো বড় ড্রেন খোলা অবস্থায় থাকা এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার জন্য অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এটার দিকে নজর দেয়া উচিত।’

ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান শেখ বলেন, ‘ডুবুরিরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সানজিদাকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু এ ধরনের বড় একটা ড্রেনের দুইপাশে কোনো ধরনের প্রটেকশন না থাকা দুঃখজনক।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাশের এলাকা নিকেতনে ঢাকনা দিয়ে রাখা আছে, তাহলে এখানে কেন নয়? এই এলাকার ড্রেনটাও সুরক্ষিত করা উচিত।’

ড্রেন থেকে শিশু সানজিদাকে উদ্ধার অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘এটা গভীর একটা ড্রেন। সাথে আছে প্রচুর ময়লা। এই ময়লার মধ্যে ডুবুরিদের কাজ করা অনেক কঠিন। কোনোভাবে যদি মাস্ক খুলে যায় তাহলে নিশ্চিত মৃত্যু।’

তিনি বলেন, ‘এই ড্রেনটা এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রাখা হলে ভবিষ্যতে আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত ঢাকনা দেয়া। তবে সেটা সম্ভব না হলেও দুই পাশে কাঁটাতার দিয়ে আটকে দেয়া উচিত। যাতে শিশুসহ জনসাধারণ এটার কাছে যেতে না পারে।’

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার তাকসিন এ খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এটা ড্রেন নয়, এটা একটা খাল। আর খাল কখনও আবদ্ধ করে রাখা যাবে না। এই খালের উন্নয়ন কাজ আগেই শেষ হয়েছে।’

খালের দুই পাশে কাঁটাতার দিয়ে আটকে দেয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। আসলে অবশ্যই করা হবে।’(বাংলামোলি)

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ০৮:১৬ পিএম,১৩ জুলাই ২০১৬,বৃহস্পতিবার
এইউ

Share