ফরিদগঞ্জ

ব্লু-হোয়েল গেম খেলে ফরিদগঞ্জের হৃদয় এখন ‘ভারসাম্যহীন’

‘ব্লু-হোয়েল’ গেম খেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বেঁচে গিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ হৃদয় নামের এক কলেজ ছাত্র। মরণফাঁদ খ্যাত এ গেমটি খেলে চ্যালেঞ্জ ‘আত্মহত্যা’ করতে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েও, বেঁচে যাওয়ার পর এখন সে ‘ভারসাম্যহীন’ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

(বুধবার) ২৫ অক্টোবর সকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। মরণফাঁদ খ্যাত এ গেমটি খেলা কিশোর ফয়সাল আহমেদ হৃদয় এখন বাঁচতে চান।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) হৃদয়ের সঙ্গে কথা হলে সে জানান, ‘আমি কখন, কেন, কী অবস্থায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েছিলাম নিজেও বলতে পারবো না। কোথা থেকে কিভাবে আমার হাতে ব্লেড এসেছিল আমি তাও বলতে পারব না। কোথায় ব্লেড আছে, আমাকে সেখানে কে নিয়ে গেল তাও আমি বলতে পারছিনা। আমার হাতে ব্লেড আসলো, আমি ব্লেড দিয়ে কেটে হাতে তিমি আঁকলাম।’ আমার মাথায় এখন কিছুই ঢুকছেনা।

তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজিতে এফ ৫৭ লিখলাম। সারা শরীরে কাটাছেড়া করলাম। পায়ের আঙুলে সুই ঢুকিয়ে দিয়েছি রক্ত বের হচ্ছে। আমি তা দেখে আনন্দ পাচ্ছি। আমার মাথা ঘুর ঘুর করে। শরীর একদম হালকা লাগছে। শরীরের উপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমার ইচ্ছা হচ্ছে সকল আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করি। আমার হয়তো সময় শেষ। কিন্তু এখন আমি এখন বাঁচতে চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে হৃদয় জানান, ‘যে ভিডিওগুলো আমি দেখেছি সেগুলো আমার মাথায় ঢুকে আছে। আমাকে সেই ভিডিও থেকে নির্দেশ করা হয় কখন কী করতে হবে। আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার মাথায় কী যেন ঘুরপাক করছে। আমি শুধু নানা ছবি দেখি। কিন্তু আমি আর সে সব দেখতে চাই না। আমি এখন বাঁচতে চাই

হৃদয়ের মা গৃহিনী জাহানারা আক্তার লাকী বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে তার ছেলে (ফয়সাল) এর গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়। এক পর্যায়ে দেখা গেলো, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেডের আঁচড়। সেখান থেকে রক্তও বের হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তার কোনো অনুভুতি নেই। পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে আলাপ করলে তারা আমাকে কিছু পরামর্শ দেন, সেই মতে আমি ঘর থেকে ব্লেড, ছুরি-চাকু, দা নিরাপদ দূরে সরিয়ে রাখি। কিন্তু পরের দিন দেখি আবারও সে তার হাত কেটেছে। তার হাতে মাছের প্রতিকৃতি ছবি আঁকা।

তিনি আরো জানান, ‘স্থানীয় ফার্মেসিতে ফয়সালকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। কিন্তু গত দু’দিন আগে দুপুর ২টার দিকে ফয়সাল হঠাৎ কওে বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে। এরপরই আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলে চাঁদপুর জেলা শহরের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সালেহ আহমেদের কাছে যাই। তিনি হয়ত ব্যাপারটি বুঝতে পারেন, এর পর তিনি ফয়সালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন।’

হৃদয়ের কাজিন কলেজ ছাত্র মেহেদী আশরাফ লিমন জানান, ‘বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে হৃদয়কে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মানসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেন। এখন হৃদয় মানসিক বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে।

প্রবাসী আব্দুল মালেকের দুই ছেলে এক মেয়র মধ্যে সবার বড় ফয়সাল আহমেদ হৃদয়। সে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ‘ব্লু-হোয়েল’ গেমটি খেলে মানসিকভাবে চরম ‘ভারসাম্যহীন’ হৃদয়কে বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রতিবেদক- মাজহারুল ইসলাম অনিক
: আপডেট, বাংলাদেশ ৬:৫৩ পিএম, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭ বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share