ব্রিজের সংযোগ সড়কে রড-সিমেন্টের বিপরীতে বাঁশ-কাদা

রাজশাহীর তানোরে শিব নদীর (বিলকুমারী বিল) উপর নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। নিম্নমানের সামগ্রী, মাটি ও বাঁশ ব্যবহার করে সেতুর সংযোগ সড়ক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীর (রাজশাহী) দফতর থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা মানেনি। রাতের আঁধারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সারওয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অনেকের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ম লঙ্ঘন করে নরম কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছে। এলাকাবাসী কয়েকবার বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালাম কনস্ট্রাকশন ফার্মের সত্ত্বাধিকারী আবদুস সালাম বলেন, ‘সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের ৬০ ফুট নিচেও কাদামাটির লেয়ার নেই। মাটি রাখলে থাকছে না। আমরা নিজেরাই কাজ করতে চাইনি। কিন্তু এলজিডির অনুরোধে কাজটি করছি। এখন দুই তিন দিনের মধ্যে যেভাবে হোক কাজটি শেষ করতে চাই।’

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রায় এক দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রথম দফায় ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ব্যয় ধরা প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে রাতের আঁধারে কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর প্রেক্ষিতে ২৬ জানুয়ারি রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সচেঞ্জ) গোলাম মোস্তফা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।

তিনি কাদামাটি সরিয়ে নিয়ে ভাল ও শক্ত মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই নির্দেশ অমান্য করে রাতের আঁধারে কাদামাটির সঙ্গে বাঁশ দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ করে চলেছে। এতে সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর ও মোহনপুর উপজেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শিব নদীর উপর ২১৫ দশমিক ৮ মিটার দীর্ঘ ওই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

সেতুটি নির্মাণে প্রায় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০১২ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ২০১৩ সালে প্রায় এক দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

ঠিকাদারি কার্যাদেশ পায় মেসার্স ফরিদ কনস্ট্রাকশন। মেসার্স ফরিদ কনস্ট্রাকশন পেলেও কাজটি করছে ছয়টি সংস্থা মিলে। এর মধ্যে রয়েছে রাকা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সালাম কনস্ট্রাকশন, ডন এন্টারপ্রাইজ।

অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ও কাদামাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় পর পর দুইবার তা ভেঙে যায়। ফলে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এদিকে ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফের নিম্নমানের সামগ্রী ও কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে।

এলজিইডি’র রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সচেঞ্জ) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা দায়ে ঠিকাদারদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তাদের এই নরম মাটি সরিয়ে শক্ত ও ভালো মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।’

তানোর এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সংযোগ সড়ক নির্মাণে অনিয়মের কোনও সুযোগ নাই। সিডিউল মোতাবেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া হবে। (বাংলা ট্রিবিউন)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০২:৫০ পিএম, ১৪ জুন ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share