তরুণীর সঙ্গে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে চ্যাট করেছেন কথিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন দুই লাখ টাকা। চাকরি না দিয়ে করেছেন ব্ল্যাকমেল। অসহায় সেই তরুণীর থানায় মামলা করেছেন। এখন কথিত সেই ‘ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ’কে খোঁজ করছেন মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক নারী আইনজীবীকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে তাকে একটি বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখান। এরপর চাকরি না দিয়ে তাকে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছেন কথিত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। এর কয়েকদিন পর ব্যারিস্টার মওদুদের অ্যাকাউন্ট থেকে মেসেজ দেয়া শুরু করেন শাকিল আহম্মদ নামে আরেকজন। মেসেজে তিনি নিজেকে ব্যারিস্টার মওদুদের অ্যাসিসটেন্ট (সহকারী) পরিচয় দেন।
শাকিল মওদুদের রেফারেন্সে ওই তরুণীকে একটি বিদেশি কোম্পানিতে ল’অফিসার হিসেবে চাকরি দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এরপর চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার (নিয়োগপত্র) চাইলে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণীর কিছু ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে তাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেল করেন।
এ ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন ওই তরুণী। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে। বর্তমানে কথিত সেই ব্যারিস্টার মওদুদের খোঁজে অভিযান চালাচ্ছেন তারা।
তদন্তে ডিবি জানতে পারে, কথিত মওদুদের নাম মো. শাকিল আহমেদ। তার বাড়ি সিলেটের গোপালগঞ্জ উপজেলার আমোনিয়া গ্রামে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, কথিত ব্যারিস্টার মওদুদ (শাকিল) ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে ওই তরুণীকে অ্যাড করেন। এরপর তিনি নিজেকে ‘ব্যারিস্টার মওদুদ’ দাবি করে তরুণীর সঙ্গে চ্যাট করতেন। ওই তরুণী কথিত মওদুদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি শাকিল নামে তার সহযোগীর সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
গত বছরের ৩ আগস্ট শাকিল ওই তরুণীর সঙ্গে পলওয়েল মার্কেটের সামনে দেখা করেন। এরপর থেকে দুজনের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে ও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
একপর্যায়ে শাকিল ওই তরুণীকে বলেন, ‘একটি বিদেশি কোম্পানির ল’অফিসারের পদে চাকরির জন্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ স্যার ১ লাখ টাকা চেয়েছেন। টাকা দিলে চাকরি নিশ্চিত হবে।’
সেসময় ওই তরুণী শাকিলকে ৬০ হাজার টাকা দেন। এরপর ‘মওদুদ স্যার চেয়েছেন’ বলে কয়েক ধাপে মোট ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন শাকিল।
মামলার এজাহারে ওই তরুণী লিখেছেন, ‘আমি বারবার তাকে চাকরির নিয়োগপত্রের জন্য তাগাদা দিলে উনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। আমাকে চাপে রাখতে আমার ব্যক্তিগত কিছু ছবি দিয়ে ‘মাসুমা রহমান অনু’ নামে একটি ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে সেগুলো আমার ছোট বোনের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন। পরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করে অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে শাকিল আবারও ‘নুসরাত জান্নাত তাসনিম’ নামে আরেকটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে আমার ছবি পোস্ট করতে থাকে টাকা দাবি করতে থাকেন। টাকা না দিলে আমার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে ওই ছবি ছড়িয়ে দেবেন বলে মেসেজ দেন।’
প্রথমে শাকিলের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি জিডি করেন ওই তরুণী। পরবর্তীতে মামলা করেন তিনি।
এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-উত্তর) গোলাম সাকলায়েন বলেন, ‘আমরা ভুয়া ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি, তাকে দ্রুত গ্রেফতার করতে পারব।’ (জাগো নিউজ)
১৯ ফেব্রুয়ারি,২০১৯