রাজনীতি

ব্যাতিক্রমী ‘মহানুভবতা’ ও ক্ষমার দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন খালেদা জিয়া

দলীয় রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তির চলমান সব প্রক্রিয়া ছাপিয়ে এবার ব্যাতিক্রমী ‘মহানুভবতা আর ক্ষমার দৃষ্টান্তই কি স্থাপন করলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ?

এবারে পৌর নির্বাচনে দলীয় কোন্দল এড়িয়ে ‘উদার রাজনীতির অনন্য নজিরই হয়তো স্থাপন করলেন তিনি । দলীয় নেত্রীর ব্যাতিক্রমি এমন সিদ্ধান্তে অবশ্য অনেকেই কিছুটা নাখোশ হয়ে আলোচনা-সমালোচনা করলেও সিনিয়র পর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, ‘ ম্যাডাম অনেক দূরদর্শিতার সাথেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’।

রাজনীতিতে অনন্য নজির স্থাপন করতে আর দল গোছাতে আপোষহীন এই নেত্রী এবার দারুণ ‘আপোষ’ করলেন! সাথে হয়তো দেখালেন তার উদারতাও !

দলীয় প্রার্থীদের চুড়ান্ত প্রত্যায়ন দেবার দ্বিতীয় দিনে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ছিলো উত্তেজক পরিস্থিতি । প্রার্থী নির্বাচনে প্রায় বিনা নোটিশেই এদিন খালেদা জিয়ার সাথে আলোচনা করে নীতিনির্ধারকেরা নিয়ে ফেলেন বেশ কিছু ব্যাতিক্রমি সিদ্ধান্ত ।

তবে দলীয় অনেক নেতা-কর্মীই মনে করছেন এসব ‘বিতর্কিত সিদ্ধান্ত’। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ মতে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ,বিএনপি নেতাকর্মী নিপীড়নকারী, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাতকারী, সংস্কারপন্থী এবং তাদের স্বজনদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগে গুলশান কার্যালয়ে এদিন ক্ষোভে ফেটে পড়ে অনেক নেতাকর্মী।

কার্যালয়ে উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক এবং পৌর মনোনয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গুলশান কার্যালয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানান,‘ম্যাডাম যেটা চূড়ান্ত করছেন তাদেরই প্রত্যয়ন দেয়া হচ্ছে।’

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার সংস্থারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম তার ‘নাবালক’ সন্তান অর্ণব নেওয়াজ মাহামুদের মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন ‘ মোটা টাকার বিনিময়ে’। এমন অভিযোগ দেশের বিভিন্ন স্থানেও ।

তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠে শিবচর পৌরসভার প্রার্থীকে নিয়ে। ক্ষোভের সাথে উপস্থিত বিএনপি কর্মীরা জানান, ‘ ২০০১ সালে খুলনা সফরকালে খালেদা জিয়ার গাড়িতে যে হামলার ঘটনা হয়েছিলো, সেই হামলায় প্রধান অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর কামালকেই এবার দেয়া হয়েছে শিবচর পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন।’

শিবচরে জাহাঙ্গীর কামাল মনোনয়ন পাচ্ছেন এই খবরে শিবচর বিএনপির সহ-সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রুমানের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে এসে। এসময় উপস্থিত সংবাদকর্মীদের মাঝে তারা সেই মামলার চার্জশিটের ফটোকপিও বিলি করেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে চার্জশিটভুক্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলমকে পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় রয়েছে মোটা অঙ্কের লেনদেনের অভিযোগ।

শিবচর বিএনপির সহ-সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন জানান ‘সমালোচনার মুখে থাকা জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে মামলার বাদী আব্দুল মান্নান খান সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন। হয়তো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি তৃণমুল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে চেয়ারপারসনের গাড়িতে হামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তার মনোনয়নের ব্যবস্থা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেয়ায় তার ভাতিজা পৌর বিএনপি নেতা, তিনিও ক্ষুব্ধ।’

শিবচর পৌর যুব দলের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে মাহিম বলেন, ‘শিবচর পৌর নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম নামে যাকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, সে ম্যাডামের গাড়িতে হামলা করেছে। আমাদের ওপর হামলা করেছে। জাহাঙ্গীর আলম আমার চাচা। ২০০১ সালের ওই হামলায় আমি উপস্থিত ছিলাম। তখন আমি উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য।’

এদিকে, জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি’র মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি এড়িয়ে যান ।

অন্যদিকে প্রত্যয়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত নেতা কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ ‘এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম আর মনোনয়ন প্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম এক ব্যক্তি নন।’

তবে এই ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা যখন লেনদেন, দেন-দরবার করে মনোনয়ন বিকিকিনি’র দাঁয় চাপাচ্ছেন বিভিন্ন শীর্ষ নেতার উপরে তখন এমন সরগরম পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপারে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের মতে, ‘চেয়ারপার্সন সবই জানেন, তার সিদ্ধান্তের বাইরে অথবা তাকে না জানিয়ে কিছুই হয়নি, যে কেউ ভুল করতেই পারে। ভুল করার পর ক্ষমা চেয়ে কেউ সঠিক পথে চলতে চাইলে তাকে অবশ্যই সে সুযোগও দেয়া উচিৎ। ’

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের খুলনা সফরের গাড়ি বহরে মাওয়া ঘাটে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতা আ. মান্নান খান বাদী হয়ে বেশ কয়েকজনের নামে মামলা করেন। মামলার চার্জশিটের অন্যতম অভিযুক্ত আসামী ছিলেন জাহাঙ্গীর কামাল।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৯:১৯ পিএম,০৬ ডিসেম্বর ২০১৫, রোববার

এমআরআর  

Share