সাভারের জামসিং জয়পাড়া এলাকায় নিজের ছোট্ট কারখানায় বসে একমনে কাজ করছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। জানা গেল, তাঁর নাম শফিকুল ইসলাম। পেশা ক্রিকেট ব্যাট বানানো। আর এ কাজ করে জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করে দিয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শফিকুল।
খেলা নয়, জীবিকার তাগিদেই ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছিলেন শফিকুল। ১৯৯৬ সাল থেকে নিজের কারখানায় ব্যাট বানাচ্ছেন তিনি। এর আগে ডেমরার একটি ব্যাট বানানোর কারখানায় ১০ বছর কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন।
শফিকুলের কারখানা বলতে একটি ভাড়া করা পাকা ঘর। সেই ঘরে দেখা গেল বেশ কিছু ব্যাট। ঘরের বাইরেও আছে কিছু ব্যাট। সেগুলো রোদে শুকানো হচ্ছে। এই কারখানায় মালিক শফিকুল ছাড়া কাজ করেন আর মাত্র একজন। অল্প বয়সী ওই কর্মচারীর বেতন পাঁচ হাজার টাকা।
সম্প্রতি কথা হয় দুই সন্তানের জনক শফিকুলের সঙ্গে। তাঁর ছেলে পড়ছেন বিএ অনার্সে, মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে।
অন্য কিছু না করে ব্যাট বানানোর কাজে কেন? জানতে চাইলে শফিকুল জানালেন, তাঁর বাড়ি ছিল চাঁদপুরে। নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারান। তারপর কাজের সন্ধানে চলে আসেন ঢাকায়। কাজ মেলে ডেমরার একটি ব্যাটের কারখানায়।
শফিকুল জানালেন, এখনকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলায় বেশি আগ্রহী। ছোটদের ব্যাট ভালোই বিক্রি হয়। হাসিমুখে জানালেন, ব্যাট বানিয়ে মাসে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। তা দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ মিটে যায়।
দিনে কম করে হলেও ২০টি ব্যাট বানান। কাঠ কেটে ব্যাটের আকৃতি করা, ঘষে ঘষে মসৃণ করা একেবারে সহজ কাজ নয়—কথার ফাঁকে জানিয়ে দিলেন শফিকুল। জানালেন, তাঁর তৈরি করা ব্যাট বেশির ভাগ সময় সাভারের নবীনগরে বিক্রি হয়ে যায়। তবে ব্যাট জমে গেলে বিক্রির জন্য ঢাকায় নিয়ে আসেন।
‘ব্যাট বানানো ছাড়া আর কোনো কাজ পারি না। এই ব্যাট বানাইয়্যাই জীবন পার হইয়া গেল।’—বললেন শফিকুল।
ক্রিকেট খেলতে পারেন? জানতে চাইতেই বললেন, ‘আফা যে কী কন!’
কারখানার কোনো নাম নেই? জানতে চাইলে একগাল হেসে বললেন, ‘গরিবের যে না কারখানা, তার আবার কী নাম দিব?
ছোট্ট এই ব্যাটের কারখানার মালিক শফিকুলের বিশ্বাস, ব্যবসা বড় হবে তাঁর। ‘কারখানা একদিন বড় হইব, তখন নাম দিব’—বললেন তিনি।(প্রথম আলো)
নিউজ ডেস্ক:
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:৫৫ পিএম,২৮ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
এএস