চাঁদপুরসহ বৃহত্তর কুমিল্লার ব্যাংক জালিয়াত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। বুধবার ২৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর বাজার এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
৩০ জানুয়ারি র্যাব-১১ মিডিয়া অফিসার মোঃ আলেপ উদ্দিন, পিপিএম (বার) স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো – দাউদকান্দি উপজেলার চরচারি পাড়ার মো. ইদ্রিস মিয়া (৪৪), মুরদানগর উপজেলার দারোরা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. মমিনুল ইসলাম (৪৬) ও রুবেল এবং একই উপজেলার পালাসুতা গ্রামের আবু বক্কর সালাফী(৪৩) ।
আটককৃতদের কাছ থেকে ম্যাগাজিনসহ বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, চাপাতি, চাকু, ও প্রিন্টারের কালিসহ রঙ্গিন প্রিন্টার,জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ২৪টি ভুয়া সীল, ১৬টি সোনালী ব্যাংকের ভুয়া লেনদেনের ভাউচার, ২৮টি বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়া মানি রিসিট ভাউচার, এনসিসি ব্যাংকের ভুয়া ২টি পেমেন্ট স্লিপ, ১১ জনের ভুয়া গলাকাটা এনআইডি এবং ভুয়া এনআইডি তৈরির ছবি-১৬ টি জব্দ করা হয়।
ভুয়া সীলের মধ্যে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের-৭ টি, ডাচ বাংলা ব্যাংকের-৪টি, সোনালী ব্যাংকের-৩টি, পূবালী ব্যাংকের- ২টি, ইসলামী ব্যাংকের ২টি, ফাহিম এন্টারপ্রাইজ আ.ছাত্তার স্যানেটারি এন্ড টাইলস হাইজ, মো. রফিকুল ইসলাম, আবু বক্কর সালাফী, নামীয় ৬ টি সীল।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ব্যাংক জালিয়াতি চক্র। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ অভিনব কৌশলে ব্যাংকের ভাউচার জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা আত্নসাৎ করে আসছে। গ্রেফতারকৃত মো. ইদ্রিস এ জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা। সে ৩ বছর পূর্বে হোটেলে কাজ করার সময় এক ভারতীয় সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ‘ পশু ভাই ’ এর সাথে তার বন্ধুত্ব হয় এবং তার কাছ থেকে ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্নসাৎ করার বিভিন্ন অভিনব কৌশল শিখে । পশু ভাই দীর্ঘদিন ধরে এটিএম বুথ হ্যাক করে বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও রেমিটেন্স জালিয়াতির সাথে জড়িত ছিল।
ইদ্রিস প্রথমে যে ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্নসাৎ করবে সেই ব্যাংক নির্বাচন করে। নির্বাচিত ব্যাংক এ প্রথমে বৈধভাবে তার পরিচিত লোক বিদেশ থেকে রেমিটেনস্স এর মাধ্যমে তার নামে অল্প পরিমাণ টাকা পাঠায়। সেই টাকা উত্তোলনের জন্য তাকে একটি গোপন পিন নাম্বার দেয়া হয়। উক্ত গোপন পিন নাম্বার নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক টাকা উত্তোলনের জন্য একটি ভাউচার তৈরি করে দেয়।
উক্ত ভাউচার দিয়ে টাকা উঠানোর আগে ইদ্রিস তার মোবাইলে ভাউচারের একটি ছবি তুলে রাখে। মোবাইলে ভাউচারের ছবি দিয়ে তার প্রিন্টারে নতুন নতুন ভাউচার তৈরি করে তাতে নতুন রেমিটেন্স নাম্বার বসিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর এবং বিভিন্ন এনআইডি’র স্বাক্ষর নকল পূর্বক গলাকাটা এনআইডি (এনআইডি’র ছবি পরিবর্তন) ব্যাংক এ জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করে।
সে এ ভাবে অগ্রণী ব্যাংকের কচুয়া সাচার শাখা ও সোনালী ব্যাংকের কচুয়া রহিমা নগর শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের কুমিল্লার মুরাদনগর শাখা,বি-বাড়িয়ার মাধবপুর শাখাসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ভাউচার জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে।
প্রতারক ইদ্রিস মিয়া ২০১৮ সালে ১১ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের বুড়িচং শাখায় বিদেশ থেকে পাঠানো গোপন নম্বরের টাকা জালিয়াতি করে তুলতে গিয়ে হাতে নাতে আটক হওয়ার পরে তাকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করলে কিছু দিন কারাগারে থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে সক্রিয় থাকে।
গ্রেফতারকৃত মমিনুল ইসলাম একজন ইউপি সদস্য। সে এ জালিয়াতি চক্রের সাথে ১ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে। ৪ মাস আগে চাঁদপুর অগ্রণী ব্যাংকের বাবুর হাট শাখায় ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সময় হাতে নাতে আটক হয়ে জেলে যায়। ১৭ দিন জেল খেটে জামিনে আসার পর পুনরায় জালিয়াতি চক্রের সাথে সক্রিয় হয়।
আবু বক্কর সালাফী ও রুবেল এ চক্রের অন্যতম সহযোগী সদস্য। এ চক্রটি ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির পাশাপাশি পেশাদার ছিনতাইকারী, ভারাটে ক্যাডার ও ডাকাতির সাথে জড়িত বলে প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে তারা স্বীকার করে।
তাদের প্রতেকের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। এ ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ওপর দীর্ঘদিন যাবৎ র্যাব-১১ বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী চালিয়ে ২৯ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে দিবাগত রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে উক্ত ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ৪ জনকে গ্রেফতার করে।
ব্যাংক জালিয়াত চক্রের মূলোৎপাটন করার লক্ষ্যে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে র্যাব তাদের প্রেস বার্তায় উল্লেখ করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ৩০ জানুয়ারি ২০২০