ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে এখন পুরো ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। সে ক্ষেত্রে আগামী ৭ ডিসেম্বরের পর যেকোনো দিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে কমিশন। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সামনে রেখেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমন্বিত নিরাপত্তাসহ নেয়া হয়েছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। এসব পরিকল্পনার বিষয় সেনা,নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান,পুলিশের আইজিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ফলে রাজনীতির মাঠেও নির্বাচনী পরিবেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ইসি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচন নিয়ে কয়েক দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০ অক্টোবর ইসিতে প্রথম বৈঠক হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। চলতি মাসে আরেকবার এ ধরনের বৈঠক হওয়ার কথা আছে।
এদিকে, ২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ রোববার এবং ১২ তারিখ বৃহস্পতিবার। সে হিসেবে মঙ্গলবারের ১০ ফেব্রুয়ারি দিকে সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট কবে নাগাদ হবে—এ প্রশ্নের জবাবে ইসি আনোয়ারুল বলেন, ফেব্রুয়ারির সেকেন্ড উইক। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হলেও অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এক-দুদিন পরে কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এক-দুদিন আগেও হতে পারে। অর্থাৎ মাঝামাঝি কোনো সময় হতে পারে।
এদিকে, তফসিল ঘোষণা ও ভোটের তারিখ নিয়ে আগামী রোববার কমিশন সভা হবে। সেখানেই সব তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে দু-তিন দিন সময় রেখে বা বৃহস্পতিবারের দিকে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
ভোটগ্রহণের সময়ও বাড়ানোর কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। আনোয়ারুল ইসলাম জানান, যেহেতু সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একদিনে হবে, তাই গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। আবার ভোটের সময়ও এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করা হতে পারে। এজন্য সকাল-বিকেলে দুদিকেই সময় বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
ইসি আনোয়ারুল আরও বলেন, এখন সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, সেটা এগিয়ে সাড়ে ৭টা হতে পারে। আবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে, সেটা বাড়িয়ে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে।
এর আগে কমিশনের প্রথম বৈঠকে ২২টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নাশকতা প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকা, জুলাই সনদ অনুযায়ী গণভোট করতে গেলে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসা এবং বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকা।
এছাড়া নির্বাচনপূর্ব কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সে ক্ষেত্রে বাহিনীগুলোকে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া, নির্বাচন কার্যালয় ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা।
এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়েই মূলত আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেয়া, যাচাই-বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের সুযোগ পাবেন। তফসিলের মাধ্যমেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হবে। ফলে নির্বাচন নিয়ে সব শঙ্কাও কেটে যাচ্ছে।
এদিকে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক প্রস্তুতিতে ‘সন্তোষ প্রকাশ করেছেন’ ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে এ নির্বাচন একটি বড় সুযোগ। সংসদ ও গণভোট পরিচালনার লক্ষ্যে ইসির একটি মহড়াও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতির দেখে আমি অভিভূত। সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে তা করা হয়েছে।
এবারের ভোটে ইইউয়ের বড় একটি প্রতিনিধি দল পর্যবেক্ষণে থাকছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ২ ডিসেম্বর সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন মিলার। বৈঠকে সিইসি জানিয়েছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এবং ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইসির সক্ষমতা ও অঙ্গীকারের বিষয়টি তুলে ধরেন মাইকেল মিলার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার ও পেশাদারত্ব এবং ভোট পরিচালনার সক্ষমতা দেখতে পেয়েছি। ২০২৬ সালে বিশ্বের বড় একটি নির্বাচন হচ্ছে বাংলাদেশে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবারের নির্বাচনে একটি খুব বড় নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন নিয়োজিত রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সুষ্ঠু ভোটে ইইউর সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে মিলার বলেন, এবারের ভোটে নানা ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে ইইউ। এ ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়ে ইইউয়ের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
৩ ডি সে ম্ব র ২০২৫
এ জি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur