আজ ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ১৯৭৮ সালে প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক ও তামাকজাত এবং সিগারেট বা বিড়ি সেবনের ক্ষতিকর দিবসটির প্রতি নজরে আনে। ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও প্রতিবছর দিবসটি উদযাপন করা হয়।
তামাক চাষ,তামাকজাতপণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার এবং তামাকের বর্জ্য পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর সে বিষয়ে জনসাধারণ এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘টোব্যাকো:থ্রেট টু আওয়ার এনভায়রনমেন্ট’। বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে‘তামাকমুক্ত পরিবেশ,সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’প্রতিপাদ্য নিয়ে।
বাংলাদেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহেেরর কারণে প্রতিবছর ১ লাখ মানুষ মারা যায় । প্রতিবছর ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। ১২ লাখ মানুষ প্রতিবছর তামাকজনিত ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার,স্ট্রোক,হৃদরোগ,অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট,লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি জটিলরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মাত্র ২৫% মানুষ চিকিৎসা সেবার হাসপাতালে যায়।
আমাদের দেশে পরোক্ষভাবে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ ধূমপানের শিকার। এর মধ্যে ১ কোটি নারী। কর্মক্ষেত্রে ৬৩% ও পাবলিক প্লেসে ৪৫% মানুষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে।শুধু হোটেল,রেস্তোঁরা ও চায়ের দোকানগুলিতে ২ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হতে হচ্ছে।
প্রাপ্ত সূত্র মতে,দেশে দৈনিক কমহলেও ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সিগারেট বা বিড়ি বিক্রি হয়। এ বিক্রিত অর্থে বাংলাদেশের ৫ বছরের নিচে প্রায় ৭০ লাখ অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদেরকে দৈনিক এক গ্লাস করে দুধ পান করানো সম্ভব অথবা ১ কোটি ৫০ লাখ অভুক্ত মানুষের ৪ শ’ক্যালোরী খাবার দেয়া সম্ভব।
এছাড়াও অন্যভাবে হিসেব কষে দেখা গেছে-ওই টাকা দিয়ে বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ৫ শ’ কোটি ডিম বা ১৫ লাখ টন চাল বা ২৯ কোটি ছোট আকারের মুরগি বা ২৯ লাখ ছোট বাছুর কেনা সম্ভব । একজন তামাক ব্যবহারকারী মাসিক তার আয়ের ৪.৫% তামাক সেবনে ব্যয় করে থাকে। বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ খাতে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। আয় হচ্ছে ২ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা ।
সুতারাং,আমাদের এখন বুঝতে বাকি নেই যে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ও সিগারেট বা বিড়ি পানে কি পরিমাণ অর্থের অপচয় ঘটছে। অপর এক সূত্র মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ হাজার ৩শ’ সিগারেট মিলিয়ন ও ১ লাখ ৮ হাজার মিলিয়ন বিড়ি উৎপাদিত হয়।
দেশে তামাকজনিত রোগীর সংখ্যা কমাতে হলে সবার সমন্বিত উদ্যোগ গ্র্রহণ করতে হবে। সচেতনতার মাধ্যমে তামাক ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তামাক ব্যবহার কমাতে বিশ্বের ৭৭ টি দেশে এরই মধ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেয়া শুরু করেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ করেছেন। সুইডেনে সর্বপ্রথম প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা দেয়া হয় । কিছুদিন পূর্বে উগান্ডায় প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ করে।

বাংলাদেশেও প্রকাশ্য ও শিশুদের সামনে বা পাশে ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার মিডিয়াতে সকল প্রকার চকলাদার তামাক,তামাকজাত পণ্য ও সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করেছে । আইনের মাধ্যমে প্রকাশ্য একজন ধূমপায়ীকে ১ শ’টাকা জরিমানা ও ৩ মাস জেল দেয়ার বিধান করা হয়েছে । কিন্তু তা বাস্তবায়নে পিঁছিয়ে আছে সরকার।
আবদুল গনি,লেখক ও সাংবাদিক,চাঁদপুর টাইমস । ৩১ মে ২০২২
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur