পেশায় পুলিশ। কর্মক্ষেত্রে নারী হয়েও পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন সব ক্ষেত্রেই নারীদের বিচরণ সম্ভব। বলছি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার লুবনা মোস্তফার কথা।
এত চ্যালেঞ্জিং একটি পেশায় কাজ করেও নিজের যত্ন নিতে ভোলেন না এই নারী পুলিশ সদস্য। সাক্ষাতকারে নিজের পছন্দ আর স্টাইলের কথা জানালেন সফল এই নারী।
প্রশ্ন : পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা কেন হলো?
লুবনা মোস্তফা : ছোটবেলা থেকেই চ্যালেঞ্জিং একটা পেশায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর দেখলাম আমি যে ধরনের পেশা খুঁজছি সে ক্ষেত্রে পুলিশ হতে পারলেই সবচেয়ে ভালো। যেখানে জনগণের সেবা করা যাবে, জনগণের কাছে যাওয়া যাবে আবার নিজেকে প্রমাণ করারও একটা পথ তৈরি হবে। এই উদ্দেশ্যে ২৮তম বিসিএস দেই। কিন্তু তখন আমি শিক্ষা ক্যাডারে সুযোগ পাই। আবার ৩০তম বিসিএস পরীক্ষা দেই। তখন আমি পুলিশ হওয়ার সুযোগ পাই। এ ছাড়া নারীরাও পারে, নারীরা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমানতালে চলতে পারে এটা প্রমাণের জন্যই এই পেশাকে বেছে নিয়েছি।
প্রশ্ন : এই পেশার সঙ্গে ফ্যাশনের কী সম্পর্ক আছে?
লুবনা মোস্তফা : নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য ফ্যাশন ও সৌন্দর্য কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে। তবে পেশার সঙ্গে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। ফ্যাশন বা সৌন্দর্য আলাদা জিনিস আর পেশা আলাদা জিনিস।
প্রশ্ন : স্টাইল বা ফ্যাশন বলতে আপনি কী বোঝেন?
লুবনা মোস্তফা : কোন পোশাকে নিজে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করব সেটাই আসলে ফ্যাশন। আমি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক পরলাম কিন্তু সেটাতে আমাকে খুব একটা মানাল না, তাকে আমি কখনোই ফ্যাশন বলব না। যখন আমি অনুভব করব এই পোশাকটি পরে নিজেকে স্মার্ট লাগছে, সেটাই আমার কাছে ফ্যাশন।
প্রশ্ন : প্রতিটি মানুষের ফ্যাশন বিষয়ে গ্রুমিং থাকা কি প্রয়োজন?
লুবনা মোস্তফা : আমার কাছে মনে হয় অবশ্যই প্রয়োজন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রুমিং না। নিজে নিজেও অনেক কিছু শেখা যায়।
প্রশ্ন : পেশার ক্ষেত্রে আপনি কেমন পোশাক বেছে নেন?
লুবনা মোস্তফা : আমাদের সব সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরতে হয় না। গোয়েন্দা বিভাগে সিভিল পোশাক পরেও আমাকে বিভিন্ন অপারেশনে যেতে হয়। আবার হরতাল ডিউটি যখন করি, তখন আমাকে ইউনিফর্ম পরতে হয়।
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবনে কোন ধরনের পোশাক আপনার ভালো লাগে?
লুবনা মোস্তফা : আমার সালোয়ার কামিজ পরতে বেশি ভালো লাগে। পশ্চিমা পোশাকে আমি খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না।
প্রশ্ন : সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার কে?
লুবনা মোস্তফা : আমার পছন্দের কোনো ডিজাইনার নেই। আমি আসলে নিজেই ডিজাইন করে পোশাক পরতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন : আপনজনের কারো কোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড এখনো কি ফলো করেন?
লুবনা মোস্তফা : আমার মা অনেক স্টাইলিশ ছিলেন। আমি দেখতাম, অনেক সাধারণ শাড়িও মা অনেক সুন্দর করে পরতেন। তাঁর পছন্দের আলাদা একটা ধরন ছিল। এই ধরন দেখেই আমি কিছুটা শিখতে পেরেছি।
প্রশ্ন : কোন অনুষঙ্গটি আপনার বেশি ভালো লাগে?
লুবনা মোস্তফা : আমার চুড়ি পরতে অনেক ভালো লাগে। সালোয়ার কামিজের সঙ্গে সিম্পল চুড়ি পরি আর শাড়ির সঙ্গে ভারী চুড়ি পরতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন : পোশাক না অনুষঙ্গ-কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দেন?
লুবনা মোস্তফা : অবশ্যই পোশাক। অনেক সময় দেখা যায় অনুষঙ্গ না হলেও চলে কিন্তু পোশাকটা রুচিসম্মত হলে দেখতে ভালোই লাগে।
প্রশ্ন : কোন রঙের পোশাক এবং কোন ধরনের পোশাক পরতে বেশি ভালো লাগে?
লুবনা মোস্তফা : আমার কাছে লাল ও নীল রঙের পোশাক বেশি ভালো লাগে।
প্রশ্ন : পারলারে গিয়ে না বাসায় পরিচর্যা-কোনটিকে প্রাধান্য দেন?
লুবনা মোস্তফা : পারলারে আমার খুব বেশি একটা যাওয়া হয় না। কারণ দেখা যায়, শুক্রবার আমি পারলারে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের অপারেশনে যেতে হলো। এ কারণে বাসায়ই টুকটাক নিজের পরিচর্যা করে নিই। মাঝে মাঝে মধুর সঙ্গে সামান্য দুধ ও লেবুর রস মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলি। এতে সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
প্রশ্ন : প্রতিটি নারীর কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত?
লুবনা মোস্তফা : নিজের ব্যক্তিত্বের বিষয়ে নারীর সচেতন থাকা উচিত। নিজে কী, কী চায় সেটা আগে নারীকে জানতে হবে। আরেকজনের মত নিয়ে না চলে নিজের মত এবং সততাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন : চাকরিজীবী নারী বা কোনো পেশায় জড়িত থাকা নারীদের কি বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি?
লুবনা মোস্তফা : অবশ্যই। প্রতিদিন বাইরে গেলে ত্বকে আলাদা একটা প্রভাব পড়ে। সে ক্ষেত্রে নিজের পরিচর্যা না করলে নিজেকে আর আপনি খুঁজে পাবেন না, একসময় হারিয়ে ফেলবেন।
প্রশ্ন : নিজেকে ফিট রাখতে কী করেন?
লুবনা মোস্তফা : আমাদের এই পেশায় তো আর ডায়েট মেনে চলা সম্ভব না। খাবারের সময়টাও ঠিকঠাক থাকে না। তাই সারা দিন প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার চেষ্টা করি। আর ফলও বেশি করে খাই। সেই সঙ্গে প্রতিদিন এক ঘণ্টার জন্য হলেও হাঁটার চেষ্টা করি।
(ছবি ও প্রতিবেদন সূত্র- এনটিভি)