এইচএসসির ফল তৈরি কীভাবে-জানালেন বোর্ড কর্মকর্তাগণ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এ পরীক্ষাগুলো আর না হওয়ায় কীভাবে ফলাফল তৈরি ও প্রকাশ করা হবে, তা নিয়ে জানতে উদগ্রীব পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে বুধবার ২১ আগস্ট বৈঠক করেছেন। সেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টরা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য আলোচনা ছিল, অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর নম্বর এবং যেগুলো হয়নি সেগুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রস্তুত।

সভায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, কীভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং হবে, সেই বিষয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ এসএসসির ফলাফল দেখে ম্যাপিং করতে বলেছেন। আবার কেউ জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষার ফলও পর্যালোচনার বিষয়টি তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে আরও বৈঠক করে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাব প্রস্তুত করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

তিনি বলেন, যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে, সেগুলোর নম্বর এবং যে পরীক্ষাগুলো হয়নি,সেগুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিং বা কোন উপায়ে ফল প্রকাশ করা যায়; সে বিষয়ে খসড়া প্রস্তাবনা পাঠাতে বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের বলা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে খসড়া প্রস্তাবনা পেলে,আমরা তা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর ফল প্রকাশ করা হবে।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে, সেগুলোর নম্বর তো আমাদের হাতে আছে। যেগুলো হয়নি,সেগুলোর জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিং করা যেতে পারে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব হবে।

ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর কীভাবে যুক্ত হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে বিষয়ের পরীক্ষাগুলো হয়েছে কিন্তু ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়নি; ওই বিষয়গুলোর ব্যবহারিকের নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে হতে পারে। আসলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের প্রস্তাবনা বা তাতে অনুমোদন পাওয়ার আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সভায় অংশ নেওয়া একাধিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালেও তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে অন্য বিষয়গুলোর ফল সাবজেক্ট ম্যাপিং করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের সামনে দুটি উদাহরণ রয়েছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে সব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের বলা হয়েছে। আমরা তা প্রস্তুত করে জমা দেবো।

৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। প্রথম দফায় প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আরও তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।

সূচি অনুযায়ী এখনো ১৩ দিনের ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে বাতিল করা হয়।

যদিও প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৩টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এরমধ্যে রয়েছে আবশ্যক বাংলা ও ইংরেজির চারটি বিষয় (প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) ও আইসিটি। বাকি ৮টি বিষয় ঐচ্ছিক (বিভাগভিত্তিক)। সিলেট বোর্ড ছাড়া বাকি বোর্ডগুলোর আবশ্যক ৬টি এবং কেউ কেউ বিভাগভিত্তিক একটি পরীক্ষাসহ ৭টি পরীক্ষা দিয়েছেন। ফলে কারও ছয়টি, কারও সাতটি পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, যেগুলো সবই বিভাগভিত্তিক।

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
২১ আগস্ট ২০২৪
এজি

Share