চাঁদপুর মতলব দক্ষিণ উপজেলার কৃষকরা বোরো ধান কর্তন নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। শুধু তাই নয় ধান কর্তন, ধান মাড়াই, ধান শুকানোর কাজে মহা ব্যস্ত কৃষক-কৃষানীরা।
চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবারও বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা।
গত কয়েক দিনের ঝড় বৃষ্টিতে এ উপজেলায় বোরো ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হয় নি বলেও জানান উপজেলা কৃষি অফিস। তবে আবহাওয়া যে কোন মুহূর্তে বিপর্যয় হতে পারে এমন আশঙ্কায় জমিনের ৮০ শতাংশ পাকা ধান কেটে ঘরে নেওয়ার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩শ’ ৭০ হেক্টর জমিনে। চলতি বছর আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৭শ’ ৭০ হেক্টর জমিন। গত বছরের তুলনায় আবাদ কম হলেও উৎপাদন বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
মতলব পৌরসভায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৭শ’ ৯০ হেক্টর, নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নে ৫শ’ ৯০ হেক্টর, নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নে ৮শ’ হেক্টর, নারায়নপুর ইউনিনে ১১শ’ হেক্টর, উপাদী উত্তর ইউনিয়নে ৫শ’ ৭০ হেক্টর, উপাদী দক্ষিণ ইউনিয়নে ৩শ’ ৭০ হেক্টর এবং খাদেরগাঁও ইউনিয়নে ৫শ’ ৫০ হেক্টর জমিনে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
৮টি জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে এ উপজেলায়। তন্মোধ্যে- ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি ধান-৫০, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৬২, ব্রি ধান-৬৪, বিআর-৩, বিআর-১৬। প্রতি হেক্টর জমিনে ব্রি ধান-২৮ গড় উৎপাদন হবে ৫.৪ মেট্রিক টন ও ব্রি ধান-২৯ গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি হবে ৬.৫ মেট্রিক টন।
বোরো ধান আবাদ হয় ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এবং কর্তন শুরু হয়েছে এপ্রিল মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত।
মতলব পৌরসভার বাবুরপাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ধানের উৎপাদন ভাল হলেও শ্রমিক সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে ধান কর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদেরকে দ্বিগুন মুজুরী দিতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও জমিনে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় ধান কর্তন করে মাড়াই ও শুকাতে কষ্ট হচ্ছে। এতে বিগত বছরের তুলনায় এবার খরচ পুষিয়ে লাভ কিছুটা কম হবে।
নায়েরগাঁওয়ের কৃষক হযরত আলী ও লাবন জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সমপযোগী পরামর্শ দেওয়ায় প্রতি বছর আশানরূপ ফসলাদি উৎপাদন হচ্ছে। এতে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠে হাসি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৪৫টি প্রদর্শনীতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০% ধান কর্তন করে কৃষকরা ঘরে তুলেছে। উপজেলায় ১৯টি ব্লকে ১৭ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের নিয়ে মাঠ প্রদর্শনী করা হয়। এতে কৃষকরা লাভবান হয় এবং দেশ সমৃদ্ধশালী হচ্ছে।
এ কর্মকর্তা আরো জানান, কয়েকদিনের ঝড় বৃষ্টিতে বিভিন্ন জেলায় ফসলাদির ক্ষয় ক্ষতি হলেও এই উপজেলায় আল্লাহর মেহেরবানীতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়া বিপর্য হওয়ার আশঙ্কায় জমিনে বর্তমানে যে সকল ধান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশ পাকা ধান কর্তন করার জন্য কৃষকদেরকে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদক : মাহফুজ মল্লিক, মতলব দক্ষিণ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৯ : ১৬ পিএম, ৩ মে ২০১৭, বুধবার
এইউ