চলতিবছর দেশের সব উৎপাদনমুখী অঞ্চলগুলোতে বোরো উৎপাদনে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এবার বোরো উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৮ টন,যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ। এছাড়া বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলনের পরিমাণও বেড়েছে।
গত বছর দেশে বোরো ধানের জাতীয় গড় ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৯৭ টন। এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৯ টনে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে দশমিক ৩২ টন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে,এ বছর বোরোর উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ১১ লাখ টনেরও বেশি হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। এবার বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সব মিলিয়ে এ উৎপাদন দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এসব বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চলতি বছরের শুরুতেই আমরা সর্বাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। সব স্তরে যেকোনো মূল্যে বোরোতে উৎপাদন বাড়াতে কাজ হয়েছে।
বীজ ও সারসহ প্রণোদনা পেয়েছেন কৃষকরা। আমাদের উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়।
গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার বোরোতে বেশি উৎপাদন হয়েছে।’ (ভোরের দর্পণ )
চাঁদপুরে বোরো উৎপাদন ২ লাখ ৫৩ হাজার মে.টন
চাঁদপুর দেশের অন্যত্তম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জরবায়ূ কৃষি উৎপাদনে সহায়ক।মেঘনা,ডাকাতিয়া,মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মা নদী বিধৌত এ চাঁদপুর। চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী।
জেলার ৪টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙ্গনগ্রস্থ,নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি। চলতি বছরে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬শ’৮৬ মে.টন চাল উৎপন্ন হয়েছে । আবাদ হয়েছিল ৬১ হাজার ২শ ৮৫ হেক্টর ।
কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুর এর উপপরিচালক মো.জালাল উদ্দিন ৭ জুন দুপুরে এ তথ্য দেন ।
তিনি বলেন,‘এবার চাঁদপুরেও চাষাবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। চলতি মৌসুমে চাঁদপুরে এবার বোরোর অনেক ভালো ফলন হয়েছে বলে তিানি জানান।এবার চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকার ধান পাকা ও চাষাবাদ মৌসুমে কৃষকদের কোনো প্রকার বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নি । চাষাবাদের সময়ও আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ ছিল । নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্খাও বিদ্যমান ছিল ।
সরকার সার,বীজ ও সরকারি প্রনোদনাও দিয়েছে যথাসময়েই। ধানের বর্তমান মূল্যও অনেক ভালো । এদিকে কচুয়ায় সম্পূর্ণ সরকারি প্রণোদনায় ৫০ একর সমালয়ায়ও এবার প্রথমবারের মত চমৎকার ফলনের কথাও বলেন তিনি ।’
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা-চাঁদপুর সদর, হাইমচর,
ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ২৩ হাজার ৩ শ’৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দু’টোতে।
চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬১ হাজার ২শ জমিতে-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৫২ হাজার ৮শ ৪২ মে.টন চাল নির্ধারণ ছিল বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি স¤প্রসারণ জানিয়েছে ।
হাইব্রিড,স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে,এবার এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৫১ হাজার ৭শ ৭৬ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪১০ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ২শ’২৮ মে.টন। হাইব্রিড ৮ হাজার ৫শ ৫১ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪৯৫ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার ৩শ’২৭ মে.টন ।
চাঁদপুররে ৮ উপজলোয় ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকে ২০২০-২১ র্অথবছরে ৩০৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা কৃষি ও অন্যান্য খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সোনালী,অগ্রণী,জনতা ও বাংলাদেশ কৃষি ও বেসরকারি ২৪টি ব্যাংকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংকের এক তথ্যে জানা গেছে । এ পর্যন্ত ২০৭ কোটি ৪২ লাখ ৯২ হাজার টাকা বিতরণ ।
এ ছাড়াও সরকার প্রতিবছরের মত এবছরও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় কম-বেশি হারে সার,বীজ ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তূকি রয়েছে সেচ চাষীদের জন্যে ২০% ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে,চাঁদপুর সদরে ২২,২৩১ মে.টন,মতলব উত্তরে ৩৭,৬৭০ মে.টন,মতলব দক্ষিণে ২০,২শ ৫৮ মে.টন,হাজীগঞ্জে ৪০,২৮২ মে.টন,শা্হরাস্তিতে ৪০,৪১২ মে. টন, কচুয়ায় ৪৯,৫১১ মে.টন,ফরিদগঞ্জে ৪০,৫৭৩ মে.টন এবং হাইমচরে ২,৭৫০ মে.টন ধান উৎপাদন হয়েছে । জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন।
আবদুল গনি ১৬ জুন ২০২১